
খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির (ওএমএস) পরিবেশক (ডিলার) নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কুমিল্লার লালমাই উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় আহ্বায়কের নেতৃত্বে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই দিন ধরে ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে তালা ঝুলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার বেলা তিনটায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমাই উপজেলা শাখার আহ্বায়ক নোমান হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি ও যাঁরা আবেদন করে পরিবেশক নিয়োগ পাননি, তাঁরা প্রথমে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপর নতুন তালা লাগিয়ে দেন। এ ঘটনার পর থেকে নিয়োগ পাওয়া পরিবেশকদের সমর্থক, বঞ্চিত পরিবেশকদের সমর্থক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ওই তালা ঝুলছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমাই উপজেলা শাখার আহ্বায়ক নোমান হোসেন নিজেও উপজেলার বাগমারা (দক্ষিণ) ইউনিয়নে ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি বাদ পড়েছেন। নোমান হোসেন বলেন, ‘খাদ্যনিয়ন্ত্রকের নির্দেশনা মেনে আমি সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমাকে কিছু না জানিয়ে গতকাল এক ওষুধের দোকানদারকে অনিয়মের মাধ্যমে লটারি ছাড়াই আমাদের ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই দিন উপজেলার অন্য দুটি ইউনিয়নেও ডিলার নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রাজিব কুমার দে নীতিমালা না মেনে ও অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে এই কাজ করেছেন।’
এরই মধ্যে পরিবেশক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি ও নিয়োগ বাতিল চেয়ে নোমান হোসেনসহ কয়েকজন জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। নোমান হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি। পাশাপাশি খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এই নিয়োগ বাতিল ও খাদ্যনিয়ন্ত্রকের শাস্তি ছাড়া এই তালা খোলা হবে না। আমরা এমন অনিয়ম কিছুতেই মেনে নেব না।’
তবে পুরোপুরি নিয়ম মেনেই পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন লালমাই উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রাজিব কুমার দে। তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি, নিয়ম মেনেই ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাদের দপ্তরে তালা ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি ইউএনও স্যারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাঁদের এসব অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এ বিষয়ে আজ দুপুরে লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ওএমএস ডিলার নিয়োগ কমিটির সভাপতি হিমাদ্রী খীসা বলেন, গতকাল যথাযথ নিয়ম মেনেই তিনটি ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলার বাগমারা (দক্ষিণ) ও ভুলইন (দক্ষিণ) ইউনিয়নে বিকল্প বৈধ প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর পেরুল (উত্তর) ইউনিয়নে বৈধ চার প্রার্থীর মধ্যে প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে একজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ইউএনও বলেন, ‘নিয়মের মধ্য দিয়েই নিয়োগ দেওয়া হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। খাদ্য অফিসের তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা জেলা প্রশাসক স্যারসহ আমার কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কোনো অনিয়ম হলে আমরা সেটি তদন্ত করে দেখব। কিন্তু এভাবে তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হয়নি। আমরা বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি। এভাবে একটি সরকারি কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রাখার কোনো সুযোগ নেই।’