
শিশুদের নোবেলখ্যাত আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার–২০২৫–এর জন্য মনোনীত হয়েছে কিশোরগঞ্জ ও জামালপুরের তিন শিক্ষার্থী। পরিবেশ, জলবায়ু, বাল্যবিবাহ ও শিশু অধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য তাদের এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে নেদারল্যান্ডসের কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন।
শিশুদের অধিকার, নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য প্রতিবছর এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৩৩ জন এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।
এ বছর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে জামালপুরের দুই বোন। তারা হলো কারিমা ফেরদৌসী (১৭) ও কাশফিয়া জান্নাত (১৪)। তারা জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের কুমারপাড়া এলাকার কাইউম হিলালী ও শিউলী খাতুন দম্পতির মেয়ে। কারিমা রাজধানীর এ কে এম রহমত উল্লাহ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর কাশফিয়া রাজধানীর বাড্ডা এলাকার রওশন আরা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তারা ২০১৫ সাল থেকেই বাড্ডা এলাকায় বসবাস করে।
অন্যজন কিশোরগঞ্জ শহরতলির শোলাকিয়া এলাকার আবদুল্লাহ আল হাসানের ছেলে মাহবুব আল হাসান (১৭)। সে শহরের হয়বতনগর এইউ কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০২৪ সালে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুই বোনের বিষয়ে কিডস রাইটস ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ ও লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে তারা নিবেদিতপ্রাণ। চার বছর ধরে অধিকার ও ন্যায়বিচার নিয়ে লেখালেখি, অ্যাডভোকেসি ও তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে। বাল্যবিবাহ থেকে অল্পবয়সী মেয়েদের বিরত রাখতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছে। তারা দুজন ইউনিসেফসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
কারিমা ফেরদৌসী জানায়, ২০১৭ সালে জাতীয় শিশু কোডিং ফেস্টে প্রথম হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের মানসিকতা দেখে দেশের জন্য কিছু করার আগ্রহ জন্মায়। সেই থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে সে। শিশু সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা ও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ হয়। লেখালেখির মাধ্যমে সে সচেতনতা সৃষ্টি করত। একপর্যায়ে ২০২১ সালে সে ইউনিসেফের নজরে আসে। এরপর নারী ও শিশুবান্ধব বাজেট, জলবায়ু পরিবর্তন, নারী শিক্ষা, নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
কাশফিয়া জান্নাত বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছা থেকে ২০২১ সালে শিশু সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করি। ইউনিসেফের আয়োজনে অ্যাডভোকেসি ট্রেনিং করেছি। এখন বাল্যবিবাহ রোধে একটি সংগঠন গড়ে তোলার কাজ করছি। পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন আমাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।’
তাদের বাবা কাইউম হিলালী প্রথম আলোকে বলেন, তারা নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে। দুজনই কাজের মাধ্যমে ইউনিসেফের নজরে আসে। তাদের সঙ্গে অনেক কাজ করেছে। তাদের এই অর্জনে তাঁর পরিবার খুবই গর্বিত।
অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের মাহবুবের বিষয়ে কিডস রাইটস ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ২০২২ সালে ‘দি চেঞ্জ বাংলাদেশ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলে মাহবুব। এর মাধ্যমে সে শিশুদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, বৃক্ষরোপণ, গাছের চারা, কলম, পেনসিল, খাতা ইত্যাদি উপহার দেওয়ার মতো নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার শিশুদের শিক্ষার অধিকার রক্ষায় নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। অসুস্থ শিশুদের রক্তের জন্য ‘ব্লাড খুঁজি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মও গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সে কাজ করে যাচ্ছে।
মাহবুব আল হাসান জানায়, শিশু শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হওয়ায় সে খুবই উচ্ছ্বসিত। এটি শিশুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার এই মনোনয়ন শিশু অধিকারের কাজের প্রতি আরও দায়বদ্ধ করল। মনোনয়ন পাওয়ায় কাজের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিল।