
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের গোডাউনবাজার থেকে কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া কলেজ গেট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার এবং পাকাকরণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত সড়কের চারটি আলাদা স্থানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচিগুলোতে লতব্দি, বাসাইল ও কেয়াইন ইউনিয়নের তিনটি বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার বাসিন্দা অংশ নেন। এ সময় সংস্কারের দাবিতে এবং দীর্ঘদিন সড়কটি বেহাল অবস্থায় থাকার প্রতিবাদ জানাতে ধানগাছের চারা রোপণ করেন বিক্ষোভকারীরা।
কর্মসূচি পালনকারীরা জানান, গোডাউনবাজার থেকে শুরু করে বাসাইল ইউনিয়নের পাথরঘাটা শাহীবাজার ও কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক দুই বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটুসমান কাদাপানি আছে। সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে যানবাহন দূরে থাক, খালি পায়ে যাতায়াতও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী তিন ইউনিয়নের ২০-২২টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
লতব্দি ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সামসুদ্দিন খান (৭৩)। তিনি বলেন, ‘এই সড়কটা আমাদের জীবনযাত্রার একমাত্র ভরসা। এ সড়ক দিয়ে আমাদের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে ঢাকা যাতায়াত করতে হয়। সংস্কারের অভাবে সড়কটি চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে ভয়ংকর গর্ত আছে। এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায় সময় যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। সুস্থ রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, অসুস্থরা হয়ে যাচ্ছেন মুমূর্ষু। গর্ভবতী মায়েদের দুর্ভোগ বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিন ইউনিয়নের মানুষজন অভিযোগ করে যাচ্ছেন। আমরাও ওপরে জানাচ্ছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাসাইল ইউনিয়নের পাথরঘাটা শাহী বাজার এলাকায় কর্মসূচি পালন করে পাথরঘাটা মডেল স্কুল, কুচিয়ামড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, পাথরঘাটা দারুল উলুম মাদ্রাসা ও পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী।
কুচিয়ামড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝুমা আক্তার বলে, ‘আমাদের বাড়ি পাথরঘাটা এলাকায়। প্রতিদিন গর্তে ভরা সড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করি। এ সড়ক দিয়ে কোনো রিকশা আসতে চায় না। তাই জুতা হাতে নিয়ে প্রতিদিন হেঁটে যাতায়াত করি। হেঁটে যাওয়ার সময়ও কয়েকবার গর্তে পড়ে স্কুল ড্রেস, বইখাতা নষ্ট হয়েছে।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুচিয়ামোড়া কলেজগেট সড়কে এবং ১১টার দিকে কুচিয়ামোড়া সড়কে শত শত ভুক্তভোগী জড়ো হন। সেখানে কাদামাটিতে ধানের চারা রোপণ করেন তাঁরা। সড়ক সংস্কারের দাবিতে নানা স্লোগান দেন তাঁরা।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আসিফ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সড়কটির বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। সড়কটি পরিদর্শনেও গিয়েছিলাম। সড়কটি সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনসহ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’