
বাগানে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারি সারি আমগাছ। প্রতিটি ডালে ঝুলছে বাহারি আম। কোনোটি গাঢ় লাল, যেন পাকা কাশ্মীরি আপেল। কোনোটার ওপরে হালকা লাল, নিচে সবুজ। কোনোটি আবার ম্লান হলুদ, চোখে লাগার মতো মোলায়েম। আবার কোনোটি বেগুনি-সবুজে ছোপ ছোপ, মনে হয় যেন হাতে আঁকা।
আমগুলো শুধু রঙেই আলাদা নয়, আকারেও বৈচিত্র্যময়। ছোট, লম্বা, মোটা, গোল কিংবা পাতলা—একেকটা একেক ঢঙের। কারও গায়ে চকচকে পলিশ, কারও গায়ে রুক্ষতা। আমের স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। এই দৃশ্য নড়াইল শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের বনগ্রামের ‘মাহিন কানন-২’ নামের এক বাগানের।
নড়াইল শহরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কবির আর তাঁর জাপানপ্রবাসী ছোট বোন জেসমিন আরা সুলতানার স্বপ্নের ফসল এই বাগান। শখের বশেই ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল চার একর জমিতে গড়া এই বাগানের পথচলা। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই মানুষ বাগানটি নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানটি বিভিন্ন রকমের ফুল ও ফল গাছ দিয়ে সাজানো। ফলদ গাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আমগাছ। একটি আমগাছের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, জাপানের বিখ্যাত মিয়াজাকি, থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই, ডকমাই, কিউজাই ও ব্যানানা ম্যাংগো, চীনের জিন হুয়াং, যুক্তরাষ্ট্রের সুপার ক্যান্ট ও আমেরিকান বিউটি জাতের পাশাপাশি দেশি হিমসাগর, কাঁচামিঠা, বারি-৮, বারি-১৩, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ দেশি-বিদেশি ৫০ ধরনের আমের গাছ আছে তাঁদের বাগানে। আছে ‘থ্রি টেস্ট’ আম, যে আমে পাওয়া যায় তিন ধরনের স্বাদ।
জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পরিবারের সবার উৎসাহে জাপানপ্রবাসী বোনের সহযোগিতায় বাগানটি গড়ে তুলেছেন তিনি। বাগানের নামকরণ করেছেন বোনের ছেলের নামে। বাগানটি দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে লোক আসেন। সবাই আগ্রহ দেখান, উৎসাহ দেন। বিষয়টি তাঁর খুব ভালো লাগে। ভবিষ্যতে বাগানটি আরও সুন্দর করে সাজাতে চান তিনি।
রোদে পাকা ফলের গন্ধে ভরে থাকে চারপাশ। দর্শনার্থীদের কাছে এই বাগান যেন এক স্বপ্নপুরী। তাই ছবি তুলতে, ঘুরতে কিংবা নিছক ফলের গন্ধ নিতে প্রতিদিনই এখানে ভিড় করেন অনেকে। নানা ফুল-ফলের সমারোহ থাকলেও সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আমগাছগুলো।
শহর থেকে বাগান দেখতে আসা কলেজছাত্র মাহিন আহমেদ বলেন, ‘পৃথিবীতে যে এত জাতের আমগাছ আছে, এখানে না এলে বিশ্বাসই করতাম না। আমগুলোর যেমন ব্যতিক্রমধর্মী নাম, তেমনি চোখজুড়ানো রং। এককথায় অসাধারণ!’
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বলেন, মাহিন কানন নামে ওই বাগানে বারোমাসিসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের আমের চাষ হচ্ছে। তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন।
শখের এই বাগান শুধু চোখের আরাম নয়, হয়েছে শ্রমিকদের জীবিকার উৎসও। বাগানটি পরিচালনার জন্য স্থায়ীভাবে নিয়োজিত আছেন চারজন শ্রমিক। বাগানের কর্মরত শ্রমিক সুজিত বাগচী ও অজয় বিশ্বাস বলেন, চার বছর আগে যখন বাগানের কার্যক্রম শুরু হয়, তখন থেকে গাছগাছালির পরিচর্যায় এখানে কাজ করছেন তাঁরা। প্রতিদিন তাঁরা ৭০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পান। এই আয়েই চলে তাঁদের সংসার।