এবার প্রতি কেজি গমবীজের মূল্য ৫৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বিএডিসি। কিন্তু চাষিদের বীজ কিনতে হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়।
সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০ কেজি বীজ দরকার। সে অনুযায়ী ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন বীজ প্রয়োজন।
আবাদ ও উৎপাদনের দিক থেকে ঠাকুরগাঁও দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা। কিন্তু এ জেলারই চাষিরা চাহিদামতো বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গমবীজ পাচ্ছেন না। আর পেলেও তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এবার প্রতি কেজি গমবীজের মূল্য ৫৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বিএডিসি। কিন্তু চাষিদের সে বীজ কিনতে হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে । বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের জাতীয় তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হয়। সেই অনুযায়ী ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে গম আবাদের জন্য ৫ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন গমবীজ প্রয়োজন।
বিএডিসি থেকে প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন গমবীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা চাহিদার মাত্র ১১ ভাগ।
বিএডিসি ঠাকুরগাঁওয়ের উপপরিচালকের (বীজ) কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় বিএডিসির ১৬১জন বীজ পরিবেশক রয়েছেন। কৃষক পর্যায়ে বিক্রির জন্য তাঁদের ৫৫৭ মেট্রিক টন গমবীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএডিসির বুথ থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছে বিক্রির জন্য ৪০ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থাৎ চাহিদার মাত্র ১১ ভাগ বীজ সরবরাহ করা হয়েছে বিএডিসি থেকে।
গতকাল বুধবার সকালে শহরের গোবিন্দনগর এলাকার বিএডিসির পরিবেশক তরিকুল ইসলামের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি দোকানি থেকে বিএডিসির গমবীজ কিনছেন। ২০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা প্রত্যয়িত বীজের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি বীজের দাম দাঁড়ায় ৭০ টাকা। যদিও বস্তার গায়ে প্রতি কেজি গমবীজের দাম ৫৮ টাকা লেখা রয়েছে। সে সময় ক্রেতা হাসান আলী বলেন, বীজগুলো সদর উপজেলার ফাঁড়াবাড়ি বাজারের এক দোকানের জন্য কেনা হচ্ছে।
তরিকুল ইসলামের কথার সূত্র ধরে ফাঁড়াবাড়ি এলাকায় গিয়ে একটি সার, বীজ ও কীটনাশকের দোকানে সেই বীজের বস্তার স্তূপ দেখা যায়। গমবীজের দাম কত জানতে চাইলে দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. আল আমীন বলেন, দেড় হাজার টাকা প্রতি বস্তা। পরে দোকানের মালিক খাইরুল ইসলাম বলেন, ডিলারদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
শহরের মন্দির পাড়ায় কৃষি বাণিজ্যালয়ে বিএডিসির গমবীজ কিনতে এসেছেন হরিহরপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেন। বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে তিনি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে তিন বস্তা গমবীজ কিনলেন। তিনি বলেন, ১ বস্তা গমবীজের দাম ১ হাজার ১৬০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁকে কিনতে হলো ১ হাজার ৫০০ টাকায়। কৃষকদের দুর্ভাগ্য তাঁরা ফসলের ন্যায্য দাম পান না। আবার বীজ কিনতে গেলে সস্তায় পান না।
চাষিদের অভিযোগ, বিএডিসির পরিবেশকেরা বরাদ্দের গমবীজ তুলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁরা এখন চাষিদের জিম্মি করে বেশি দাম আদায় করছেন। সদর উপজেলার ফাঁড়াবাড়ি এলাকার গমচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি পাটিয়াডাঙ্গী এলাকার একজন খুচরা বীজ বিক্রেতার কাছ থেকে বিএডিসির ২০ কেজি ওজনের গমবীজ কিনেছেন। বস্তার গায়ে ৫৮ টাকা কেজি লেখা থাকলেও দোকানি তাঁর কাছ থেকে প্রতি কেজি ৭৫ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো রসিদও দেননি।
শহরের গোবিন্দনগরের তামিম এন্টারপ্রাইজে গিয়ে বিএডিসির গমবীজের দাম জানতে চাইলে দোকানের ব্যবস্থাপক আমির হোসেন বলেন, এলাকায় যে পরিমাণ বিএডিসির গমবীজের চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় বরাদ্দ নেই। তাঁদের বিভিন্ন এলাকা থেকে গমবীজ সংগ্রহ করতে হয়। ফলে দামটা একটু বেশি নিতে হয়।
বিএডিসি বীজ পরিবেশক মো. ফরিদউদ্দিন জানান, তিনি এবার তিন টন গমবীজ বরাদ্দ পেয়েছেন। দুদিনেই তা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন অনেক চাষি বীজের খোঁজ করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে বিএডিসির বীজ না পেয়ে বেশি দামে অন্য কোম্পানির বীজ কিনে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিএডিসির উপপরিচালক (বীজ বাজারজাতকরণ) আবদুর রশিদ বলেন, কোন জেলায় কত বীজ উৎপাদন করা হবে ও বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা সিড প্রমোশন কমিটি নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে তাঁদের কোনো ভূমিকা নেই। তবে জেলায় আরও গমবীজ বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জেনেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল আজিজ বলেন, এবার চাষিরা হঠাৎ করে গম চাষে ঝুঁকেছেন। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবার গম বীজের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে এবার কৃষি বিভাগ চাষিদের গমবীজ প্রণোদনা দিয়েছে। তাতে বীজের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। আর কৃষক পর্যায়েও কিছু বীজ মজুত আছে।