
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের ওসমান গণি ওরফে বাদল বিয়ে করেছেন বছর পাঁচেক আগে। তিন বছর আগে কন্যাসন্তানের বাবা হন তিনি, আদর করে মেয়ের নাম রাখেন আরওয়া আক্তার। দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী ওসমান গণি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ খবর পান, বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে মারা গেছে তাঁর একমাত্র আদরের কন্যা।
তিন বছর বয়সী একমাত্র কন্যাসন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে আসার জন্য তাৎক্ষণিক বিমানের টিকিট কাটেন ওসমান গণি। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরপর ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে দাদা শফিকুর রহমান বাড়ির বাইরে যাচ্ছিলেন। তখন দাদার পিছু নেয় শিশু আরওয়া। এ সময় বৃদ্ধ শফিকুর রহমান নাতনিকে বসতঘরের দিকে পাঠিয়ে চলে যান নিজের কাজে। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে দেখেন, নাতনিকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর শুরু হয় চারদিকে খোঁজাখুঁজি। স্বজনেরা সবাই মিলে খুঁজতে থাকার একপর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে আরওয়ার নিথর দেহ ভেসে ওঠে। এই খবর জানানো হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা আরওয়ার বাবা ওসমান গণিকে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, একমাত্র সন্তানকে শেষ বিদায় জানাবেন। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী শিশুটির লাশ রাখা হয় লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে।
ওসমান গণি আজ সকালে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সড়কপথে বাড়িতে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগতে পারে, এ জন্য তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের হেলিকপ্টারে করে সকাল পৌনে ১০টায় পাশের গুণবতী ডিগ্রি কলেজ মাঠে নামেন। এরপর সেখানে থেকে বাড়িতে গিয়ে একমাত্র সন্তানের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওসমান। বেলা ১১টায় জানাজা শেষে আরওয়ার লাশ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কন্যাজড়িত কণ্ঠে প্রবাসী ওসমান গণি বলেন, ‘আমি আট মাস আগে ছুটি শেষে সাউথ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (গতকাল) বিকেলে বাড়ি থেকে খবর পাই, আমার মেয়ে আরওয়া পানিতে পড়ে মারা গেছে। খবরটা শুনতেই বুকটা ফেটে গেছে। মেয়েটার সাথে কত স্মৃতি। মেয়েটি ভাঙা ভাঙা শব্দে আমার সাথে কথাও বলত। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর খবর কোনো অবস্থাতে মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিই, আমার সন্তানকে দাফন করতে আমি বাড়িতে যাব।’