নরসিংদী সদরের চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার এই বাড়িতে ভূমিকম্পের সময় ছাদ ধসে দুজন মারা গেছেন
নরসিংদী সদরের চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার এই বাড়িতে ভূমিকম্পের সময় ছাদ ধসে দুজন মারা গেছেন

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে মৃত্যু বেড়ে ৫

নরসিংদী সদর, পলাশ ও শিবপুর উপজেলায় আজ শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ছাদ ধসে বাবা-ছেলে মারা গেছেন।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও তাঁর ছেলে মো. ওমর ফারুক (৯), পলাশের ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের নয়াপাড়া এলাকার নাসির উদ্দীন (৬৫) ও চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার কাজম আলী ভূঁইয়া (৭৫) এবং শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৩৫)।

দেলোয়ার ও ওমর ফারুক একতলা ভবনের ছাদ ধসে আহত হন। পরে তাঁরা মারা যান। আর নাসির উদ্দীন ভূমিকম্পের সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে এবং কাজম আলী মাটির ঘরের দেয়ালচাপা পড়ে মারা যান।

বাবা-ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত দেলোয়ারের ভাই জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই দেলোয়ার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যান। এর আগে ঢাকায় নেওয়ার পথে ভাতিজা ওমর ফারুক মারা যায়।’

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় মাটির ঘরের ধসে পড়া দেয়ালের চাপায় কাজম আলী ভূঁইয়া নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। আজ সকালে উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকায়

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভূমিকম্পের সময় পাশের একটি বহুতল ভবনের ছাদ থেকে নির্মাণসামগ্রী ছিটকে পড়ে তাঁদের একতলা ভবনে। এতে ভবনটির ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়ে। এ সময় দেলোয়ার, তাঁর মেয়ে তাসফিয়া ও ছেলে ওমর ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছিল। ছিটকে পড়া নির্মাণসামগ্রী ও ধসে পড়া ছাদের টুকরা মাথায় পড়ে গুরুতর আহত হন তাঁরা। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দ্রুত তিনজনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দেলোয়ার ও ওমরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন বলেন, শিশু ওমরের মৃত্যুর খবর জানতে পারলেও তাঁর বাবা দেলোয়ারের সর্বশেষ পরিস্থিতি তাঁদের জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ভূমিকম্পের সময় পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের নয়াপাড়া এলাকায় নাসির উদ্দীন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

মৃত নাসিরের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন জানান, সকালে ভূমিকম্পের সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘরে বসে কথা বলছিলেন নাসির উদ্দীন। হঠাৎ ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে তিনি অসুস্থবোধ করেন। ঝাঁকুনি শেষে উঠে দাঁড়াতেই বুকে হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে পাশে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নরসিংদীতে ভূমিকম্পের পর এভাবে একটি কাঁচা সড়ক দেবে যায়

নাসিরের ছেলে আয়নাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের ধারণা, আমার বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমরা লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছি। জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতি চলছে।’

এদিকে পলাশের চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকায় মাটির ঘরের ধসে পড়া দেয়ালচাপা পড়ে কাজম আলী ভূঁইয়া (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে মাটির ঘরটিতে অবস্থান করছিলেন তিনি।

স্বজনেরা জানান, ভূমিকম্পের সময় তীব্র ঝাঁকুনিতে আতঙ্কিত দুই নাতি-নাতনি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও কাজম আলী বের হতে পারেননি। এ সময় ঘরের একটি দেয়াল ধসে তাঁর ওপর পড়ে। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যান স্বজনেরা। সেখান থেকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

কাজম আলীর চাচাতো ভাই আউয়াল মিয়া বলেন, কাজম আলীর জানাজা বাদ মাগরিব নিজ বাড়ির মসজিদ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করার প্রস্তুতি চলছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে

পলাশ থানার উপপরিদর্শক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকম্পে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে একজন মারা গেছেন বলে জেনেছেন।

শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা গ্রামে ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে গিয়ে ফোরকান মিয়া (৩৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ভূমিকম্পে তাঁর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, ভূমিকম্পের সময় ফোরকান মিয়া গাছের ওপর ছিলেন। তীব্র ঝাঁকুনিতে তিনি নিচে পড়ে যান। পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে প্রথমে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৭। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫।