ভূমিকম্পের পর ঢাকার কেরানীগঞ্জে জিনজিরা ফেরিঘাট সংলগ্ন লছমনগঞ্জ এলাকার হলুদ রঙের ভবনটি থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে প্রশাসন
ভূমিকম্পের পর ঢাকার কেরানীগঞ্জে জিনজিরা ফেরিঘাট সংলগ্ন লছমনগঞ্জ এলাকার হলুদ রঙের  ভবনটি থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে প্রশাসন

কেরানীগঞ্জে ‘হেলে পড়া’ ভবন খালি করতে প্রশাসনের নির্দেশ মানা হয়নি

গতকাল শুক্রবারের ভূমিকম্পে ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ফেরিঘাটসংলগ্ন লছমনগঞ্জ এলাকায় একটি সাততলা ভবন হেলে পড়ার পর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। প্রশাসন কর্তৃক ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও ভবনমালিক নির্দেশনা মানছেন না। ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ভবনের ভাড়াটিয়ারাও।

ভবনটি আবদুর সাত্তার মিয়ার মালিকানাধীন। গতকাল সকালে ভূমিকম্পের পর ভবনটি পাশের নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ওপরে কাত হয়ে পড়ে। পরে রাতেই উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে ভবনের মালিক ও ভাড়াটিয়াদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

আজ শনিবার বিকেলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) ঢাকা জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী খায়রুল আলম ভবনটি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে খবর পেয়ে ভবনটি পরিদর্শনে এসেছি। প্রাথমিক পরিমাপ নেওয়া হয়েছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলকে বিষয়টি জানানো হবে। তাদের মতামত পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আজ সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, সাততলা ভবনটি পাশ্ববর্তী ভুট্টু মিয়ার নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের উপরের দিকে কাত হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির ১৩টি ফ্ল্যাটে এখনো ১৩টি পরিবার বসবাস করছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা উৎসুক জনতা ভবনের সামনে ভিড় জমিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবনের এক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় ভয়ে বাচ্চাদের নিয়ে নিচে নেমে আসি। বাইরে এসে দেখি, ভবনটা পাশের বাড়ির দিকে কাত হয়ে গেছে। এখনো ভয় কাটছে না। গতকাল রাতে প্রশাসন বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে, কিন্তু বাড়িওয়ালা থাকতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, “সমস্যা নেই, তোমরা এখানে থাকো। কোনো সমস্যা হলে আমি বুঝব।’”

ভবনটি কতটা হেলে পড়েছে তা পরিমাপ করছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। শনিবার বিকেলে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ফেরিঘাট সংলগ্ন লছমনগঞ্জ এলাকায়

আরেক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘ভবনটি কাত হয়ে পড়ার পর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাটের সন্ধান করেছি। কিন্তু উপযুক্ত কোনো ফ্ল্যাট পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি, যদি কিছু হয়ে যায়।’

ভবনমালিক আবদুর সাত্তার মিয়ার দাবি, ভূমিকম্পের পর থেকে তাঁর বাড়ি নিয়ে কিছু লোক গুজব ছড়াচ্ছেন। বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে উল্লেখ করে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন বাড়ির লোকজনকে ফ্ল্যাট ছাড়তে বলেছেন। আমার বাসায় তেমন কোনো সমস্যা নেই। ভূমিকম্পে বাড়িটির কোনো ক্ষতিও হয়নি। কিন্তু কিছু লোক আমার বাড়িটিকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।’

এ বিষয়ে জিনজিরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল গণি বলেন, সাততলা ভবনটি কাত হয়ে পড়ার বিষয়টি তাৎক্ষণিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ভবনটি খালি করার জন্য ভবনমালিককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি নির্দেশনা অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।