আমরা দুর্বল নির্বাচন ও দুর্বল গণতন্ত্র চাই না: জামায়াতের আমির

সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। বুধবার বিকেলে সিলেটের বিয়ানীবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় আনতে হলে আমাদের একটা কার্যকর নির্বাচন লাগবে। সেই নির্বাচনটা আমরা আশা করছি আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই নির্বাচনটা কেমন চাই? অবশ্যই অতীতের বস্তাপচা ধারায় নির্বাচন চাই না এবং এমন কোনো নির্বাচন আমরা মেনেও নেব না।’

বুধবার বিকেলে সিলেটের বিয়ানীবাজারে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জনশক্তি ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শফিকুর রহমান। বিয়ানীবাজার পৌর শহরের দাসগ্রাম এলাকায় উপজেলা ও পৌর জামায়াত আয়োজিত এই সমাবেশে জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ। এই নির্বাচন হতে হবে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ওপর। সমতল মাঠ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে হবে। কোনো মাস্তানতন্ত্র চলবে না। কালোটাকার খেলা মানব না। এগুলা নিশ্চিত করে আগামী বছরের প্রথমে নির্বাচন দিতে হবে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন বিলম্বিত হলে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হবে, এই বুঝ আমাদের আছে। কিন্তু আমরা প্রি ম্যাচিউরড ডেলিভারি চাচ্ছি না। ১০ মাস ১০ দিনে যে বাচ্চা জন্ম দেয়, সে বাচ্চা স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ সবল থাকে। ছয় মাসের মাথায় বাচ্চা জন্ম হলে তাকে ইনকিউবেটরে রাখতে হয়। ওই বাচ্চা সারা জীবন দুর্বল থাকে। আমরা এ রকম কোনো দুর্বল নির্বাচন ও দুর্বল গণতন্ত্র চাই না।’

গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে মজবুত খুঁটির ওপর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা সংস্কারের কথা বলেছি, অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছি দুর্ভোগ কমানোর জন্য। বহু জায়গায় এখন স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি নাই। জনগণ সাফারিংয়ের মধ্যে রয়েছেন। এ কিসের রাজনীতি, জনগণকে সাফারিংয়ের মধ্যে রেখে দেব। এ জন্য আমরা বলেছি আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে জনগণের সাফারিং দূর করেন।’

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার চেয়েছি। এই আন্দোলন, বিপ্লব এই অভ্যুত্থান আমরা একা করি নাই। আমাদের প্রবাসীরা সমান কৃতিত্বের দাবিদার। তাঁদের ভোটাধিকার কেন থাকবে না? তাঁদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের ভোটাধিকার শুধু নিশ্চিত করলেই হবে না। ভোট প্রয়োগ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এইগুলো কী আমাদের অন্যায় আবদার? এগুলো আমাদের যৌক্তিক দাবি। প্রবাসীরা হাজার ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হন। তাঁর মূল কারণ হচ্ছে তাঁদের ভোটাধিকার নাই। এ জন্য যাঁরা সরকারে যায় তাঁদের গুরুত্ব দেয় না।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড এ দেশের আঠারো কোটি মানুষ। আমরা নিজেদেরসহ কাউকে মাস্টারমাইন্ড মনে করি না।’

সম্প্রতি ইউরোপ ও চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিদেশিরা বলেছেন, “তোমাদের দেশে যদি একটি জিনিসের ওপর বিজয় অর্জন করতে পারো, তাহলে তোমাদের দেশ বদলাতে ২০ থেকে ২৫ বছরের বেশি সময় লাগবে না।” তাঁরা অবজারভেশন জানিয়েছেন দুর্নীতি, দুর্নীতি এবং দুর্নীতি। তাঁরা বলেছেন, আমাদের দেশের দুর্নীতি দেখে তাঁরা লজ্জিত হন। কিন্তু আমরা লজ্জিত হই না। এই দুর্নীতি ঠেকাতে পারলেই আমাদের দেশ বদলে যাবে।’

জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা অতীতে বিপদ এলেও দেশ ছেড়ে যায়নি মন্তব্য করে দলটির আমির বলেন, ‘আমরা দেশ ও জনগণকে ভালোবাসি আর আমাদের বিদেশে কোনো বেগমপাড়া নেই। যারা দুর্নীতি করে, তারা আকাশে মেঘ দেখলেই বিদেশে চোরের মতো পালিয়ে যায়।’