নরসিংদীর রায়পুরা

লাশের ১৭ জায়গায় ছররা গুলির চিহ্ন, মামলা হয়নি এখনো

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুলহাস মিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত চলছে। মর্গের বাইরে লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় তাঁর স্বজনেরা। আজ দুপুর পৌনে একটায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর রায়পুরায় ঈদের দিন বাড়িতে ঢুকে মো. জুলহাস মিয়া (২৮) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। বর্তমানে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত চলছে। অন্যদিকে, ঘটনার সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া অপর চারজনের মধ্যে দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের শরীর থেকে এখনো গুলি অপসারণ করা যায়নি।

গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার চরাঞ্চল নীলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাঁও পূর্বপাড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত জুলহাস মিয়া রায়পুরার ওই গ্রামের শামসুল মিয়ার ছেলে। তিনি মুরগির খামারি ছিলেন।

মো. জুলহাস মিয়া (২৮)

গুলিবিদ্ধ হওয়া অপর চারজন হলেন ইয়ামিন মিয়া (১৮), হাবিব মিয়া (১৬), সাদ্দাম মিয়া (৩২) ও রাইজুদ্দিন মিয়া (২৬)। ইয়ামিন ও হাবিব বর্তমানে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সাদ্দাম ও রাইজুদ্দীন নরসিংদী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হতাহতদের স্বজনেরা জানান, তাঁদের উপস্থিতিতে গতকাল রাতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় নিহত জুলহাসের শরীরে ১৭ জায়গায় ছররা গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বুকের বাঁ পাশে ৪টি, পায়ের ওপরের অংশে ৪টি ও হাতে ৩টি গুলি লেগেছিল তাঁর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়ামিনের ঠোঁটে এবং হাবিবের গলার রগে ছররা গুলি লেগেছে। এখনো সেখানকার চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে তাঁদের শরীর থেকে গুলি অপসারণ করতে পারেননি। অন্যদিকে সাদ্দাম ও রাইজুদ্দিনকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে এনে ভর্তির চেষ্টা চলছে।

পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জালাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি ককটেলজাতীয় নানা ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরির সঙ্গে জড়িত। তিনি প্রায়ই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেন। ঈদের দিন বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জন এলাকায় ককটেল ফাটাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলের পাশেই জুলহাসের মুরগির খামার। সেখানে জুলহাসসহ প্রায় ২০ জন আড্ডা দিচ্ছিলেন। জুলহাস বিস্ফোরণের শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে জালাল মিয়াকে অনুরোধ করেন, মুরগিগুলো ভয় পায়, তাই এখানে যেন আর ককটেল না ফাটান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। জালালসহ তাঁর লোকজন তখন চলে যান।

প্রায় ৩০ মিনিট পর তাঁরা কিছু টেঁটা, পাইপগান ও শটগান নিয়ে আসেন। এসব দেখে ভীত হয়ে জুলহাসসহ অন্যরা বাড়িতে ঢুকে পড়েন। জালালের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জন বাড়িতে ঢুকে তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন। এতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ জুলহাস, হাবিব ও ইয়ামিনকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে জুলহাস মারা যান। গুলিবিদ্ধ অন্য দুজনকে নরসিংদী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিহত জুলহাসের মামা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘটনার সময় আমিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। এমন তুচ্ছ বিষয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে টেঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁরা হামলা চালাবেন, বাড়িতে ঢুকে গুলি করে দেবেন, ভাবতে পারিনি। জালাল মিয়ার নেতৃত্বে অন্তত ৫০ স্থানীয় তরুণ-যুবক এই হামলায় অংশ নিয়েছেন। অংশ নেওয়া অনেক ব্যক্তিকেই আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। ময়নাতদন্তের পর লাশ দাফন শেষে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় যাব আমরা।’

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জালাল মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা পলাতক। এ ঘটনায় বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রায়পুরা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুলহাসের লাশের ময়নাতদন্ত চলছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এখনো আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তা দ্রুত মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। আশা করছি, জড়িত ব্যক্তিরা দ্রুত গ্রেপ্তার হবেন।’