Thank you for trying Sticky AMP!!

সমাবেশে দাঁড়িয়েছে গরু-ছাগল, বক্তব্য দিয়েছে মহিষ

প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশে হাজির করা হয় গরু, ছাগল মহিষ ও পাখিদের। এ সময় সমাবেশে ভায়োলিন বাজানো হয়। আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের সাগরিকা পশু বাজার এলাকায়

ব্যানারের পেছনে দাঁড়িয়েছে গরু, ছাগল, ভেড়া। বক্তব্য দিচ্ছে মহিষ আর কবুতর। সারি করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসবের মাঝে দাঁড়িয়ে একমনে ভায়োলিনের করুণ সুর বাজাচ্ছিলেন দুই তরুণী। এই দৃশ্য কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন। কেউ ছবি তুলছিলেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড়ে ‘প্রকৃতি ও প্রাণিকুলের’ প্রতিবাদী সমাবেশে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ল।

প্রকৃতি ও প্রাণী নিয়ে এমন ভিন্নধর্মী আয়োজন দেখতেই ভিড় করেছিলেন পথচারীরা। মূলত মানুষের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রকৃতি ও প্রাণিকুলের সমাবেশ। ব্যতিক্রমধর্মী সমাবেশটির আয়োজন করেছেন এক যুবক। তাঁর নাম টুটুল চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন টুটুল। এখন শিল্পচর্চা করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় পারফর্মিং আর্ট ও প্রামাণ্যচিত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত আছেন। সেই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের হালিশহরের এই বাসিন্দা এমন প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।

সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সাউন্ডবক্সে কখনো গরু, মহিষের ডাক, কখনো পাখির কলতান, কখনো শনশন হাওয়ার সুর বাজানো হচ্ছিল। টেবিলের ওপর রাখা ছিল অঞ্জলি, পাতাবাহার, রাধাচূড়া, হাসনাহেনা, বেলি, পাথরকুচিসহ নানা ধরনের গাছপালা। টুটুল চৌধুরী বললেন, ‘গরু, ছাগল, ভেড়া কিংবা গাছপালা বলছে, আমাদের রক্ষা করো। আমাদের ধ্বংস করো না।’

কেন এমন ভিন্নধর্মী আয়োজন, তাঁর ব্যাখ্যা দিলেন টুটুল। বললেন, মানবকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা, শাসন, নিয়মকানুন, আইন ইত্যাদি প্রকৃতি ও প্রাণিকুলকে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে। এখন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোতে সবকিছুই মানুষ নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষের মতো করে প্রকৃতি ও প্রাণিকুলকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতি ও প্রাণিকুলের কিছু বলার রয়েছে। সে ভাবনা থেকে এই প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন। স্থানীয় হাটবাজার থেকে এসব প্রাণী আনা হয়।

প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশে হাজির করা হয় গরু, ছাগল মহিষ ও পাখিদের। এ সময় সমাবেশে ভায়োলিন বাজানো হয়। আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের সাগরিকা পশু বাজার এলাকায়

চট্টগ্রামে নির্বিচারে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। উজাড় করা হচ্ছে বনজঙ্গল। নগরে একের পর এক তৈরি হচ্ছে দালান। এসবের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন—এমনটাই মনে করেন টুটুল। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতিকে ধ্বংস করার ফলাফল আমরা ভোগ করছি। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়েই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্প বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘ কমে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। তাই সচেতনতা তৈরিতে এই ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কর্মসূচি নেওয়া হবে। ’

প্রাণিকুলের এমন প্রতিবাদ মুঠোফোনে ধারণ করছিলেন পথচারী সৈয়দ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। অলংকার এলাকায় একটি পানের দোকান চালান তিনি। সালাউদ্দিন বলেন, ‘এত দিন মানুষের মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশে দেখেছি। আজ দেখলাম, গাছপালা ও প্রাণীর প্রতিবাদ। এটা বেশ ভিন্নধর্মী আয়োজন।’ সালাউদ্দিনের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে মোহাম্মদ আলভি বলেন, ‘এই পৃথিবীতে গাছেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে, এই বিষয় আমরা ভুলে যাচ্ছি। এ কারণেই প্রকৃতি অনেক সময় বিরূপ আচরণ করছে।’