কমতে শুরু করেছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। শুক্রবার দুপুরে জেলার বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া এলাকায়
কমতে শুরু করেছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। শুক্রবার দুপুরে জেলার বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া এলাকায়

দুই দিন ধরে পানি কমায় গোমতীপারে স্বস্তি

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে গোমতী নদীর পানি বাড়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছিলেন গোমতীপারের বাসিন্দারা। পানির স্তর বিপৎসীমার নিচে থাকলেও আতঙ্কে অনেকে নির্ঘুম রাত কাটান। তবে দুই দিন ধরে পানি কমতে শুরু করায় স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে অন্তত চার ফুট পানি কমেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, হঠাৎ করে গোমতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মতো বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে পানি কমতে শুরু করায় ইতিমধ্যে সেই শঙ্কা কেটে গেছে। যেভাবে পানি কমছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।

গত বছরের ২২ আগস্ট রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলা। সেই ঘটনার পর থেকেই গোমতীতে পানি বাড়লেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

পাউবোর কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার গোমতী নদীর পানির বিপৎসীমার স্তর ১১ দশমিক ৩০ মিটার। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে নদীর পানি বেড়েছিল। তখন ৯ দশমিক ৬৮ মিটারে স্তরে পানি প্রবাহিত হয়। এর পর থেকে ধীরগতিতে হলেও পানি কমতে শুরু করে। আজ শুক্রবার বিকেল ছয়টায় ৮ দশমিক ৪৮ মিটার স্তরে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই হিসাবে গতকাল সকাল থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত ৩৩ ঘণ্টায় গোমতীর পানি কমেছে ১ দশমিক ২০ মিটার; যা প্রায় চার ফুটের মতো। বর্তমানে বিপৎসীমার প্রায় ৯ ফুট নিচ দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বৃষ্টি না হওয়ায় পানি দ্রুত কমছে।

আদর্শ সদরের অরণ্যপুর এলাকার গোমতীপারের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা চরের মইধ্যে থাকি। ভাবছিলাম, এইবারও গাঙ্গের পানি আমরার সব ভাসাইয়া লইয়্যা যাইব। তয় দুই দিন ধইরা পানি বাড়তাছে না। বৃহস্পতিবার রাইতে বৃষ্টি হইলেও পানি বাড়ছে না। আল্লাহ আমরারে রক্ষা করছে। পানি অনেক কইম্যা গেছে। গাঙ্গের আঁইলের মাইনষের আতঙ্ক এহন আগের মতো নাই।’

বুড়িচংয়ের কামারখাড়া এলাকার মোতালেব হোসেন বলেন, পানি কমছে এটাই বড় স্বস্তির খবর। মানুষের মধ্যে যে উৎকণ্ঠা ছিল, সেটা অনেকটা কেটে গেছে। আজ সারা দিন সূর্যের তাপ থাকায় পানি অনেক কমে গেছে। এভাবে আরও দু-এক দিন গেলে গোমতী নদী আগের অবস্থায় ফিরবে। তিনি বলেন, বিগত সময়ে মাটিখেকোরা গোমতী চরের মাটি লুট করে নিয়ে চরকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। যার কারণে পানি বাড়লে বিপৎসীমার নিচে থাকলেও চরের অনেক কৃষিজমি তলিয়ে যায়। এবারও পানি বাড়ায় চরের শাকসবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, গোমতীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেটি ইতিমধ্যে কেটে গেছে। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে কাল-পরশুর মধ্যে নদীর অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বন্যার সৃষ্টি হয়নি। জেলার নাঙ্গলকোট, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জের কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। সেগুলোও ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সমাধান করা হয়েছে।

কুমিল্লা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে বর্তমানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শূন্য। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শনিবার চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।’