রংপুর সিটির কাউন্সিলর জাকারিয়ার জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে

জাকারিয়া আলম
ছবি: সংগৃহীত

রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আলম ওরফে শিপলুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাহমুদুল হকের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। বিচারক আহসানুল হক তিনটি মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করলেও একটি মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জাকারিয়া আলম গত বুধবার যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক সরকার মাজহারুল মান্নানসহ তিনজনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বাদী। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে নগরের দর্শনা মোড়ে রেলগেট এলাকার একটি বাড়ি থেকে জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, তিনি চারটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, জমিসংক্রান্ত একটি মামলায় আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। রেজওয়ান আহমেদ নামের এক ব্যক্তি এই মামলার বাদী।

আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজ রহমান বলেন, কোতোয়ালি থানার তিনটি, তাজহাট থানায় একটিসহ চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশ জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানায় নেয়। এর মধ্যে বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখার অভিযোগে দুটি এবং জমি দখল ও মারামারিসংক্রান্ত দুটি মামলা আছে। পরে আজ দুপুরে তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গতকাল বিকেলে জাকারিয়া নগরের দর্শনা মোড়ে রেলগেট এলাকায় তাঁর ভগ্নিপতির বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করতে যায় পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে স্থানীয় লোকজন ও দলের নেতা-কর্মীরা পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। এতে পুলিশ বাড়ির ভেতরে ঢুকতে বাধা পায়। এদিকে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে, সঙ্গে পুলিশের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

একপর্যায়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জাকারিয়ার সঙ্গে কয়েক দফায় কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর বাধার মুখে সেটাও সম্ভব হয়নি। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আলোচনার কথা বলে নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর বাধার মুখেই জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়।

জাকারিয়া আলমকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ দলীয় নেতা–কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। গতকাল শুক্রবার রাতে নগরের দর্শনা মোড় রেলগেট এলাকায়

উল্লেখ্য, সংবাদ প্রকাশের জেরে বুধবার যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক সরকার মাজহারুল মান্নানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া। আদালতের বিচারক আবদুল মজিদ অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ (৫৫) ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাফিউল ইসলাম শাফি (৫০)।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১ এপ্রিল রাত ৯টায় যমুনা টেলিভিশনের অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘ক্রাইম সিনে’ কাউন্সিলর জাকারিয়া আলমকে ভূমিদস্যু আখ্যায়িত করে, সরকারি দলের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি, সাধারণ মানুষকে হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আসামিরা যোগসাজশ করে কাউন্সিলর জাকারিয়ার মানহানি, সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে বর্তমান সরকার তথা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে দুর্বল ও জনবিচ্ছিন্ন করতে অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে মামলা করার পরদিন গত বৃহস্পতিবার রংপুরের সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন থেকে মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি জাকারিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।