রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিনশেডের এই ঘরেই দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা। সম্প্রতি তোলা
রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিনশেডের এই ঘরেই দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা। সম্প্রতি তোলা

রাঙামাটির জুরাছড়ি

টিনশেড ঘরে গাদাগাদি করে চলে চিকিৎসা

সর্বোচ্চ চারজন গাদাগাদি করে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে উপজেলা থেকে নৌকায় তিন ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

টিনশেড ঘর। চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীকে শোয়ানো হলো এর একটি ছোট্ট কক্ষে। পাশেই গাদাগাদি করে রাখা ওষুধের খালি বাক্স। এক কোনায় বসে রয়েছেন একজন চিকিৎসক। এ কক্ষে আবার রয়েছে ফার্মেসিও। পাশে ছোট্ট একটি কক্ষে ল্যাবরেটরি। আরেকটি কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে গুদামঘর হিসেবে।

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলা কমপ্লেক্সের চিত্র এটি। তিন কক্ষের এ ঘরের পাশে পরিত্যক্ত আরেকটি টিনশেড ঘর ব্যবহৃত হচ্ছে জরুরি বিভাগ হিসেবে। এর অবস্থাও করুণ। সর্বোচ্চ চারজন গাদাগাদি করে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে উপজেলা থেকে নৌকায় তিন ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সাল থেকে এভাবে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। ওই বছরের আগস্টে পুরোনো ১০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর শুরু হয় চারতলা নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। ৫০ শয্যার এ নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউটি মং। এ প্রতিষ্ঠানের হয়ে নির্মাণকাজ তদারকিতে ছিলেন মো. ছলিমুউল্লা নামে এক ব্যক্তি। তিনি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। এরপর থেকে ভবনের নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণের এ প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশও শেষ হয়নি। গত বছর জুনেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নির্মাণ বাবদ এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন মো. ছলিমউল্লা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের চারদিকে লতাপাতা গজিয়েছে। অনেক জায়গায় পড়ে আছে রড, পাথর, শাটারিংয়ের কাঠ। এসব মাল চুরির আশঙ্কায় পাহারা দিচ্ছেন এক কর্মী। জানতে চাইলে মো. সাগর নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘শুনেছি কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাই কাজ বন্ধ। এখন ঠিকাদার আত্মগোপনে রয়েছেন। আমি ভবনে পড়ে থাকা মালামাল পাহারা দিচ্ছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সাল থেকে এভাবে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। ওই বছর আগস্টে পুরোনো ১০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর শুরু হয় চারতলা নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। ৫০ শয্যার এই নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউটি মং। এ প্রতিষ্ঠানের হয়ে নির্মাণকাজ তদারকিতে ছিলেন মো. ছলিমুউল্লা নামে এক ব্যক্তি। তিনি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। এরপর থেকে নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।

জানতে চেয়ে প্রকল্পের ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ছলিমুউল্লার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. অলিউর রহমান বলেন, ‘পুরোনো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমরা এখন নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করছি। এটি অনুমোদিত হলে দরপত্র ডেকে আবার নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’

হাসপাতাল সূত্র জানায়,  উপজেলা কমপ্লেক্সে চার শয্যা থাকলেও প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিতে আসেন ৫০ থেকে ৭০ জন রোগী। জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁদের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকেরা। এ উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে সড়কপথের যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত। দুর্গম এলাকা থেকে কেউ হেঁটে অথবা কেউ কাঁধে করে রোগী নিয়ে আসেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

নির্মাণাধীন নতুন ভবন। তবে এর ৫০ শতাংশ কাজ শেষ না হতেই লাপাত্তা ঠিকাদার। সম্প্রতি তোলা

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সোহেলপাড়া গ্রামের প্রচ্ছন্ন মালা চাকমার সঙ্গে কথা হয়। তিনি আক্ষেপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে একজন অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে এনেছি; কিন্তু এখানে জায়গা নেই বলে তাঁকে রাঙামাটি পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমরা আর কীভাবে সেবা পাব।’ সুমন্ত চাকমা নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, হাসপাতালে জায়গার অভাবে তাঁরা চিকিৎসা নিতে পারেন না। বাধ্য হয়ে তাঁদের রাঙামাটি সদরে যেতে হয়।

আমরা মাত্র পাঁচটি কক্ষে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছি। চিকিৎসক, ওষুধ বিতরণ, ল্যাব—সব একসঙ্গে চলছে। এতে রোগী যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনি চিকিৎসকের পক্ষেও ঠিকঠাক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অনন্যা চাকমা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুরাছড়ি উপজেলা

জানতে চাইলে জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অনন্যা চাকমা বলেন, ‘আমরা মাত্র পাঁচটি কক্ষে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছি। চিকিৎসক, ওষুধ বিতরণ ও ল্যাব একসঙ্গে চলছে। এতে রোগী যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনি চিকিৎসকের পক্ষেও ঠিকঠাক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বায়েজীদ-বিন-আখন্দ বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কক্ষ–সংকট ও চিকিৎসা সমস্যা প্রায় সময় সমন্বয় সভায় উঠে আসে। তবে ভবনের কাজ নিয়ে আলোচনা খুব একটা হয় না। আমি খোঁজ নিচ্ছি, যেন দ্রুত কাজ শুরু হয়।’