Thank you for trying Sticky AMP!!

‘ঈদে এসে কেউ গলা জড়িয়ে ধরে বলবে না, দাদু কেমন আছ?’

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহত কমলা বেগম ও তাঁর সন্তানকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে। রোববার সকালে বোয়ালমারী উপজেলার মাইট কুমড়া গ্রামে

প্রতিবছর কোরবানির ঈদে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যেতেন আলমগীর খান। বছরের এই সময়টার অপেক্ষায় থাকতেন আলমগীরের মা সালেহা বেগম (৬৮)। এবারও তাঁরা এসেছেন। তবে আলমগীর ছাড়া সবাই ফিরেছেন লাশ হয়ে। গতকাল শনিবার এক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে আলমগীরের স্ত্রী ও তাঁর তিন সন্তানকে। ঘটনার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে সালেহা বেগমের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।

সালেহা বেগম বলেন, ‘সারা বছর এই সময়ের জন্য চাইয়া থাকতাম। আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করত বড় নাতি আরিফ। বাড়িতে এসেই আমার গলা জড়াইয়া বলত, দাদু আমি আসছি। তুমি আমায় আদর করো। যত দিন বাড়িতে তাকত, আমার পাছ ছাড়ত না। আজ আমার যে কী সর্বনাশ হইয়া গেল। আর আমারে কেউ দাদু বলে গলা জড়ায় ধরবে না।’

Also Read: এক্সপ্রেসওয়েতে আগুনে পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স থেকে ৭ জনের লাশ উদ্ধার

গতকাল শনিবার ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় আলমগীর খানের স্ত্রী কমলা বেগমসহ (২৯) তাঁর তিন সন্তান আরিফ (১২), হাসিব (১০) ও হাফসা (১), শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, শ্যালিকা বিউটি বেগম (২৬) ও বিউটির ছেলে মেহেদী (১০) নিহত হয়। কমলার শ্বশুরবাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইট কুমড়া গ্রামে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ মুসলিমপাড়া মহল্লায় স্বামী আলমগীর খানের সঙ্গে থাকতেন তিনি।

একসঙ্গে স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের হারিয়ে বাক্‌রুদ্ধ আলমগীর খান। শোকার্ত ছেলেকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর মা সালেহা বেগম। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বোয়ালমারীর মাইটকুমড়া গ্রামে সালেহা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

Also Read: এক্সপ্রেসওয়েতে আগুনে পুড়ে নিহত সাতজনের পরিচয় মিলেছে, চারজন একই পরিবারের

দুর্ঘটনায় একসঙ্গে তিন নাতিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সালেহা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। রোববার বোয়ালমারী উপজেলার মাইট কুমড়া গ্রামে

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সালেহা বেগম বলেন, ‘কাইল থেকে কাইন্দা যাচ্ছি। চোখের জল বাঁধ মানছে না। আমার কী সর্বনাশ হইয়া গেল। এখন আমার ছেলে আলমগীরের কী হবে?’ একটু সংবিৎ নিয়ে বললেন, ‘তোমরাও ওকে (আলমগীরকে) একটু বোজাইও। ওর মুখের দিকে তো চাইতে পারি না। শুকাইয়া মুকখান এতটুকু হইয়া গেছে। এত কষ্ট ও ক্যামনে সহ্য করবে? বউ, ছেলে, মেয়ে সবাইরে একসঙ্গে হারাইয়া ও ক্যামনে বাঁইচা থাকবে?’

গতকাল রাত নয়টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে কমলা বেগম ও তাঁর তিন সন্তান লাশ নসিমনে করে মাইটকুমড়া গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে আনুমানিক ৩০০ মিটার দূরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।

Also Read: এক্সপ্রেসওয়েতে আগুনে পুড়ে যাওয়া সেই অ্যাম্বুলেন্সের আহত চালক যা বললেন

কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেছে, সারিবদ্ধ চারটি কবর। পলিথিন দিয়ে কবর ঢেকে দেওয়া হয়েছে, যাতে বৃষ্টির কারণে মাটি সরে না যায়। তার ওপরে খেজুরের ডাল বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আলমগীর খান গ্রামের অন্যদের সঙ্গে কবরগুলো তদারক করছিলেন। ইশারা করে দেখালেন, একেবারে পশ্চিম দিকের কবরটি কমলার, তারপর মেয়ে হাফসার, তারপর বড় ছেলে আরিফ এবং পূর্ব দিকে শেষেরটি ছোট ছেলে হাসিবের। আরিফ ষষ্ঠ ও হাসিব পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

কবরস্থানে কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা কাজী গোলাম সরোয়ারের (৮৫) সঙ্গে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। বললেন, ‘এমন মৃত্যুর ঘটনা এ গ্রামের লোক আগে কখনো শোনেনি। আমিও আমার চাকরিজীবনে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা দেখিনি।’

Also Read: ময়নাতদন্ত ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত ব্যক্তিদের লাশ হস্তান্তর

Also Read: এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে চলছে মাতম