
ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৪১ পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা অনুদানের চেক আটকে রাখার অভিযোগে জেলা পরিষদের প্রশাসক জিয়া আহমেদের (সুমন) অপসারণের দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা। এ দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। পরে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
দুপুরে জেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কেরা। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনের ব্যানারে উল্লেখ করা হয়, ‘আওয়ামী মদদপুষ্ট অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পরিষদ প্রশাসক জিয়া আহমেদের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন। গত বছর গণ-আন্দোলনে ময়মনসিংহের ৪১ জন শহীদ পরিবারের সরকারি আর্থিক অনুদান প্রাপ্তিতে বাধা কেন? জানতে চাই প্রশাসনের কাছে। ফ্যাসিস্ট তাড়াও, আওয়ামী দোসর খেদাও। আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারের মর্যাদা রক্ষা করুন।’
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শহীদ রেদোয়ান হোসেনের বাবা আসাদুজ্জামান ও শহীদ আবদুল্লাহ আল মাহিনের বাবা জামিল হোসেন। তাঁরা জানান, গত মাসে কাগজপত্র জমা নিলেও তাঁদের অনুদান দেওয়া হচ্ছে না। অথচ দেশের ৬৩টি জেলা পরিষদ থেকে অন্য শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু ময়মনসিংহে টালবাহানা করা হচ্ছে।
বিভাগীয় কমিশনার আজ তাঁর কার্যালয়ে না থাকায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের কাছে এ বিষয়ে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। তাহমিনা আক্তার বলেন, জেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অনুদানের জন্য চেক রেডি করা হয়েছে। ২৯ মে এসব চেক বিতরণ করা হবে। প্রশাসকের অপসারণের দাবির বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করা হবে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আন্দোলনে নিহত ৪১ জনের জন্য সরকার ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ ময়মনসিংহ জেলা পরিষদে পাঠিয়েছেন। এই ৪১ জন সরকারি গেজেটভুক্ত। আগেও মন্ত্রণালয় থেকে ৫ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছে এই পরিবারগুলো। তবে জেলা পরিষদের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব কার্যক্রম শেষ করা হলেও বর্তমান প্রশাসক জিয়া আহমেদ অনুদানের বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের খাস দোসর। তাঁকে ময়মনসিংহে দেখতে চান না তাঁরা। যে অফিসার নিহত ছাত্রদের অনুদান নিয়ে টালবাহানা করেন, দীর্ঘদিন ফেলে রাখেন, তাঁকে আমরা ময়মনসিংহবাসী চাই না। তাঁকে অনতিবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া হোক। তা না হলে তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন এবং মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হবেন তাঁরা।
ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জিয়া আহমেদ। তিনি গত ১৭ এপ্রিল এই কর্মস্থলে যোগ দেন। শহীদ পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তাঁর ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কবির হোসেন সরদার বলেন, ‘আমাদের প্রশাসকও নতুন যোগ দিয়েছেন, এ কারণে একটু দেরি হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পরই আমরা তালিকা আপডেট করে ফাইলটি প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু ব্যস্ততা ও যাচাই–বাছাই করার জন্য একটু দেরি হয়ে গেছে।’