
বরিশালের উজিরপুরে সন্ধ্যা নদীতে অপহরণের শিকার ট্রলারচালক মাহবুব হাওলাদারকে উদ্ধারের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। সোমবার সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কের ইচলাদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ওই মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এ সময় মহাসড়কের দুপাশে কয়েক হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। দুর্ভোগে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। দুপুর একটার দিকে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে এসে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ট্রলারচালক মাহাবুব হাওলাদার উজিরপুরের শিকারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মুণ্ডপাশা গ্রামের সেকান্দার হাওলাদারের ছেলে। গত ৩১ জানুয়ারি রাতে তিনি সন্ধ্যা নদীর রাহুতকাঠি ঘাট থেকে শিকারপুর আসার পথে ট্রলারসহ নিখোঁজ হন। এরপর ১০ দিনেও তাঁর সন্ধান মেলেনি।
নিখোঁজ মাহবুবের পরিবারের সদস্যরা জানান, মাহাবুব শিকারপুর ঘাটে নিয়মিত খেয়া পারাপারের জন্য ট্রলার চালাতেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি খেয়াঘাট থেকে ৮ থেকে ১০ জন তরুণ ও কিশোর যাত্রী উজিরপুরের শিকারপুর প্রান্তে যাওয়ার জন্য তাঁর ট্রলারে ওঠেন। নদীর মাঝখানে পৌঁছালে ওই ট্রলারে হঠাৎ চিৎকার শোনা যায়। তবে আশপাশে অন্য কোনো ট্রলার না থাকায় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যাননি। স্বজনদের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জেরে ও চাঁদাবাজদের চাঁদা না দেওয়ার কারণে পরিকল্পিতভাবে মাহাবুবকে ট্রলারসহ অপহরণ করা হয়েছে।
মাহবুবকে উদ্ধারের দাবিতে আজ সকাল ১০টায় ইচলাদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা। এতে ঢাকা থেকে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মহাসড়কের দুপাশে হাজার হাজার পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি আটকা পড়ে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন উজিরপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. শহীদুল ইসলাম খান, সদস্যসচিব মো. রোকুনুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন আকন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক শাহাবুদ্দিন আকন, উজিরপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
নিখোঁজ মাহবুবের বড় ভাই জামাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই একজন নিরীহ মানুষ। তিনি ট্রলারচালক। তাঁকে বিনা কারণে অপহরণ করা হয়েছে। আজ ১১ দিন পর্যন্ত আমরা তাঁকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা তাঁকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।’
অন্য বক্তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে একদল মৌসুমি চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং, দখলবাজেরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় মাহবুবকে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা কৌশলে ট্রলারসহ অপহরণ করে গুম করে রেখেছে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি মাহবুবকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান বক্তারা। একই সঙ্গে মৌসুমি চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করারও দাবি জানান তাঁরা।
বক্তারা নিখোঁজ মাহবুবকে উদ্ধারে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মাহবুবকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে না দিলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
ঘাটের ইজারাদার ও নিখোঁজ মাহবুবের ভাই জামাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের খোঁজ না দেওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা নদীতে খেয়া পারাপার বন্ধ থাকবে।’
দুপুরে উজিরপুরের ইউএনও মো. আলী সুজা ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. ইকরামুল আহাদ ঘটনাস্থলে এসে সবাইকে বুঝিয়ে মানববন্ধন স্থগিত করার জন্য অনুরোধ করেন এবং নিখোঁজ মাহবুবকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে দুপুর একটার দিকে মানববন্ধন প্রত্যাহার করা হয়।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম বলেন, নিখোঁজ মাহবুবকে উদ্ধারে বাবুগঞ্জ ও উজিরপুর—দুই থানার পুলিশ যৌথভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অপহরণের শিকার মাহবুবের বড় ভাই জামাল হোসেন বাদী হয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি বাবুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।