
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ সহজ করতে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন চালু করেছে মাইসেন্টমার্টিনবিডি ডটকম (mysaintmartinbd.com) নামের একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটে ঢুকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের অনুমতি নেওয়া থেকে শুরু করে হোটেল, মোটেল ও হোমস্টে বুকিং দেওয়া যাবে।
বঙ্গোপসাগরের বুকে নীলজলের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন দেখার ইচ্ছা কমবেশি সবার থাকে। কিন্তু প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এই দ্বীপ ভ্রমণে যেতে হলে মানতে হয় সরকারি বিধিনিষেধ। এসব বিধিনিষেধ মেনে দ্বীপে ভ্রমণের অনুমতি কীভাবে পাবেন, সেখানে গিয়ে কোথায় থাকবেন, এমন ভাবনায় পিছিয়ে আসেন অনেকে। কিন্তু এখন এই সমস্যার সহজ সমাধানে চালু হয়েছে ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটে ঢুকে অনুমতি জোগাড়, থাকার জায়গার বুকিং দেওয়া—এসব এখন ঘরে বসেই করা যাবে।
পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ, হয়রানি-বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ৪ নভেম্বর এই ওয়েবসাইট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন। মাইসেন্টমার্টিনবিডি ডটকম (mysaintmartinbd.com) নামের এই ওয়েবসাইট চালুর প্রথম ৭ দিনে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন। এর মধ্যে অন্তত ৩৫০ জন অনলাইনে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের আবেদন করে পারমিট (অনুমতিপত্র) নিয়েছেন।
যে কারণে ওয়েবসাইট
নিয়মকানুন জানা না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ টেকনাফ পৌঁছে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের শিকার হন তাঁরা। সেন্ট মার্টিন যেতে না পেরে অনেকে হতাশ হয়ে টেকনাফ থেকে গন্তব্যে ফিরে যান। তাতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে পারেন ১ নভেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস। বছরের অবশিষ্ট ৯ মাস পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ নিষিদ্ধ। আবার ওই ৯ মাসে দাপ্তরিক কাজ, গবেষণা, তথ্য সংগ্রহসহ জরুরি প্রয়োজনে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবী, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজনকে সেন্ট মার্টিন যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি কাঠের ট্রলার, স্পিডবোট কিংবা নৌযানে চড়ে সেন্ট মার্টিন গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জেরার মুখে পড়তে হয়। অনেক লোকজনকে মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয়। তাতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। এ কারণে দুর্ভোগ কমাতে চালু হয়েছে ওয়েবসাইটটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের অনেকের বিধিনিষেধ সম্পর্কে ধারণা থাকে না। বিষয়টি সহজ করতে প্রশাসন ওয়েবসাইট চালু করেছে।
বাড়বে ইকোট্যুরিজম
নতুন এই ওয়েবসাইট চালু হওয়ায় পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি ছোট ছোট হোমস্টেতে থাকার সুযোগ পাবেন। এতে ভ্রমণের খরচ যেমন কমে আসবে, তেমনি পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দেখার সুযোগ পাবেন। এ জন্য ওয়েবসাইটে স্থানীয় লোকদের ১০৬টি ঘরবাড়ি ও ছোট ছোট কটেজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পর্যটকেরা সরাসরি স্থানীয় লোকজনের বাসা ও গেস্টরুম বুকিং করতে পারবেন। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন পরিবেশবান্ধব-কমিউনিটি ট্যুরিজম ব্যবসায় উৎসাহিত হবেন।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, মাইসেন্টমার্টিনবিডি ডটকম ওয়েবসাইটটি এই কয়েক দিনে বেশ সাড়া ফেলেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ওয়েবের মাধ্যমে সরাসরি পছন্দের ঠিকানায় কল দিয়ে স্থানীয় লোকজনের বাসাবাড়িতে তৈরি গেস্টরুম বুকিং দিচ্ছেন। গত বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাসে দৈনিক দুই হাজার করে পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে এসে দ্বীপের জেটিঘাট এলাকায় কয়েকটি বহুতল ভবনের হোটেল রিসোর্টে রাত কাটিয়েছিলেন। দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা আরও দুই শতাধিক রিসোর্ট-কটেজ ও গেস্টরুম খালি পড়েছিল। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট চালুর পর ছোট ছোট কটেজ, গেস্ট হাউসগুলো অতিথি পাচ্ছে।
নতুন এই ওয়েবসাইট চালু হওয়ায় পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি ছোট ছোট হোমস্টেতে থাকার সুযোগ পাবেন। এতে ভ্রমণের খরচ যেমন কমে আসবে, তেমনি পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দেখার সুযোগ পাবেন। এ জন্য ওয়েবসাইটে স্থানীয় লোকজনের ১০৬টি ঘরবাড়ি ও ছোট ছোট কটেজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পর্যটকেরা সরাসরি স্থানীয় লোকজনের বাসা ও গেস্টরুম বুকিং করতে পারবেন। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন পরিবেশবান্ধব-কমিউনিটি ট্যুরিজম ব্যবসায় উৎসাহিত হবেন।
ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা গেছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ, পর্যটকদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়, তেমনি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কোথায় কী আছে, কোন হোটেলের কক্ষভাড়া কত, যোগাযোগের ঠিকানাও রয়েছে। আছে সেন্ট মার্টিনের আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থানগুলোর বিবরণ, পর্যটকবাহী জাহাজের টিকিট কেনার লিংক, সময়সূচি, ভাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, হাসপাতাল, পুলিশ, বিচকর্মীর মুঠোফোন নম্বর, দুই শতাধিক হোটেল ও হোম স্টের দুই শতাধিক আবাসন–সম্পর্কিত তথ্য সন্নিবেশ রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত ১২ দিনে কোনো পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারেননি। নভেম্বর মাসে পর্যটকদের দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার নির্দেশনা রয়েছে। তাতে ভ্রমণের সময় কম পাওয়া যায় এবং জাহাজে টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বসে থাকাকে দুর্ভোগ মনে করছেন পর্যটকেরা। আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সেন্ট মার্টিনে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে, তখন দৈনিক দুই হাজার পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারেন। সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষায় বছরের বাকি ৯ মাস দ্বীপে পর্যটকের যাতায়াত নিষিদ্ধ করে সরকার।
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন সাগর পথে পর্যটকবাহী জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’–এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেন ১ লাখ ১১ হাজার পর্যটক। সরকারি বিধিনিষেধ জানা না থাকায় বহু পর্যটক ঘাটে এসেও টিকিট না পেয়ে সেন্ট মার্টিন যেতে পারেননি। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেও অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে পারেন। প্রথমবারের মতো মাইসেন্টমার্টিনবিডি ডটকম ওয়েব চালু হওয়ায় অনেকে ঘরে বসে সেবা নিতে পারবেন।