চট্টগ্রাম

দুই আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি বিএনপি, তবু মনোনয়ন নিলেন যাঁরা

চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত দুটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। এই দুটি আসন হলো বন্দর-পতেঙ্গা ও চন্দনাইশ। এরই মধ্যে দুটি আসন থেকে দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে তাঁদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা এখন আলাপ-আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা ও ৩৪টি থানা এলাকা নিয়ে ১৬টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে চারটি আসন নগর এলাকায়। ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে গত ৩ নভেম্বর দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর আরও চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)

বিএনপি এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে গতকাল সোমবার এই আসন থেকে নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর আগের দিন আসনটি থেকে মনোনয়নপত্র নেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী। তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘এক পরিবার থেকে এক প্রার্থী’ ঘোষণা দেওয়ার কারণে আমীর খসরুর ছেলেকে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পরপর চারবার এই এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বাবার গোছানো আসনে তাই দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ইসরাফিল খসরু। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসরাফিল খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২ বছর ধরে এলাকায় কাজ করছি। বাকিটা দলের নীতিনির্ধারকদের বিষয়।’

এই আসন থেকে মনোনয়নপত্র নেওয়া বিএনপির নেতা নাজিমুর রহমান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। নগর ছাত্রদলের সভাপতি পদেও ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে নাজিমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মেনে নেব।’

ইসরাফিল ও নাজিমুর ছাড়াও এই আসনে নাসিমুল আনোয়ার নামের বিএনপির অঙ্গসংগঠনের এক কর্মী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনটি গঠিত হয়েছে। এর আগে এলাকাটি অন্য আসনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে ব্যবসায়ীদেরও। কারণ, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম কাস্টমস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ আমদানি-রপ্তানিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এলাকাটিতে অবস্থিত।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক)

বিএনপি এখন পর্যন্ত আসনটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলের দক্ষিণ জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি মিজানুল হক চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম এই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জাকির হোসেন নামের বিএনপির এক কর্মী।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থিতা করার উদ্দেশ্যে মনোনয়নপত্র নিয়েছি। বাকিটা দলের নীতিনির্ধারকদের বিষয়।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এলডিপির সঙ্গে বিএনপির জোট গঠন হলে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা না করার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে এলডিপির জন্য আসনটি ছেড়ে দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির পক্ষে দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুক মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তিনি এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য।

দুটি আসনে দল থেকে প্রার্থী ঘোষণা না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জোটের কারণে দলের নীতিনির্ধারকেরা একটু সময় নিচ্ছেন।