নিহত সায়ান ইউসুফ
নিহত সায়ান ইউসুফ

‘আমার সোনার পুতুলটারে আর কোনো দিন দেখতে পারব না’

দুপুর সাড়ে ১২টা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রাম। গ্রামের রাস্তায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতেই তার পিছু নেন একদল মানুষ। সবার চোখেমুখে শোকের ছাপ। কেউ কেউ চোখ মুছছিলেন। বাড়ির আঙিনায় অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতেই বাড়ির ভেতর থেকে কান্নার রোল উঠল। অ্যাম্বুলেন্স ধরে শব্দ করে কাঁদছিলেন অনেকে। এরই মধ্যে এক বৃদ্ধার আহাজারি, ‘আমার সোনার পুতুলটারে আর কোনো দিন দেখতে পারব না।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে এভাবে নিজের গ্রামের বাড়ি আনা হয় ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়ান ইউসুফের মরদেহ। গতকাল সোমবার বেলা একটার পর ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সায়ানেরও মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৬৫ জন। বেশ কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

আজ দুপুরে অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রামে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শোনা যায় স্বজনদের মাতম। ছেলের কফিনের পাশেই কান্না করতে দেখা যায় মা শামীমা শাম্মীকে। দাদি কামরুন নাহারের বড়ই আদরের ছিল সায়ান। চিৎকার করে তিনি বলছিলেন, ‘সায়ানরে, আমার সোনার পুতুলটা, আর কোনো দিন দেখতে পারব না।’

সায়ানের মৃত্যুর খবরে গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম

নিহত সায়ানের বাবা এ এফ এম ইউসুফ মাইলস্টোন কলেজ শাখার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মা শামীমা শাম্মী মাইলস্টোন স্কুল শাখার রসায়নের শিক্ষক। তাঁরা উত্তরা–১০ নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সায়ান তাঁদের একমাত্র সন্তান ছিল।

আজ দুপুরে গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা হয় সায়ান ইউসুফের চাচাতো ভাই পারভেজ আহমেদের সঙ্গে। সে বলে, ‘সব সময়ই হাসিখুশি থাকত সে। মেধাবী আর বিনয়ী হওয়ায় সবারই প্রিয় ছিল। গ্রামে এলে ছোটাছুটি করত, খেলত। সেই সায়ান আজ কফিনে বিদায় নিচ্ছে।’

পারভেজ আহমেদ আরও বলে, ‘গতকালের সকাল অন্য দিনের মতোই ছিল। প্রতিদিনের মতোই স্কুলের পোশাক পরে স্কুলে গিয়েছিল সে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত সে। কিন্তু কে জানত, সেদিনই তার জীবনের শেষ দিন।’

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আজ বেলা তিনটায় জানাজা হয়েছে সায়ানের। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।