ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন। একই দাবিতে গতকাল রোববার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এর মধ্যে রয়েছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর ভিকটিম’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, পরিসংখ্যানে হবে না’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘নিপীড়ক হাসে, ভিকটিম কাঁদে’, ‘নিপীড়কমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ ইত্যাদি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চাই না বিভাগের অন্য কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটুক। আমরা ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেটা দেখে অন্য বিভাগের কোনো শিক্ষক এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার সাহস না পান।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট পরিসংখ্যান বিভাগের এক অধ্যাপক তাঁর ব্যক্তিগত কক্ষে এক ছাত্রীকে ডেকে এনে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ১৩ আগস্ট সুষ্ঠু বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বিভাগের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে বিভাগ কর্তৃপক্ষ। গতকাল সেই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. আক্তার আলীকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যৌন হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে আইনি মতামতের জন্য লিগ্যাল সেলের কাছে পাঠানো হয়েছে। ছাত্রদলের করা ফ্যাসিস্ট শিক্ষকের তালিকায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম আছে।
অভিযোগের বিষয়ে ওই অধ্যাপক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ অসত্য ও ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক পাপিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের বিভাগের তদন্ত কমিটিতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাঁরা বিচক্ষণতার সঙ্গে সবকিছু তদন্ত করেছেন। সেখানে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়েছে যে দুটি কারণে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি চলে যায়, ওই শিক্ষক দুটি কাজই করেছেন। একাডেমিক ক্রাইম ও যৌন হয়রানি করেছেন তিনি। সুতরাং তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি এবং এই অপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি।’