
চট্টগ্রামের রাউজানে আবারও বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়ে দুটি ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দাদের দাবি, টিন ও বাঁশের বেড়া কেটে তাঁরা ঘর থেকে বের হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে চারটার দিকে রাউজান পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সুলতানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর দুটি হিন্দু সম্প্রদায়ের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আগুনে দুটি ঘরের সাতটি কক্ষ পুড়ে যায়। ওই দুটি ঘর সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা সুখ শীল ও অনিল শীলের। এর মধ্যে সুখ শীল দুবাই প্রবাসী এবং অনিল শীল পেশায় দিনমজুর।
ঘর দুটির বাসিন্দারা জানান, ঘর দুটির কোথাও টিন এবং কোথাও বাঁশের বেড়া দেওয়া ছিল। দুটি পরিবারের ৮ জন সদস্য ঘরে ছিলেন। রাতে খাবার খেয়ে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। এর মধ্যে রাত পৌনে চারটার দিকে ঘরে আগুন জ্বলে ওঠায় তাঁদের ঘুম ভাঙে। তবে বের হতে গিয়ে দুটি পরিবারের সদস্যরাই দেখতে পান দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে বাঁশ ও টিনের বেড়া কেটে ঘর থেকে বের হয়ে তাঁরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
অনিল শীলের ছেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইপ্রবাসী মিঠুন শীল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রবাস থেকে তিন মাস আগে ছুটিতে দেশে এসে বিয়ে করেছেন। গতকাল রাতের আগুনে তাঁর পাসপোর্ট, বাড়ির আসবাব, নগদ ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকাসহ অনেক মূল্যবান মালামাল পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ঘর থেকে সবাই হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে দেখি দুটি দরজাতেই বাইরে থেকে হুক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর যে যার মতো বেড়া কেটে ঘর থেকে বের হয়েছি।’
আগুনের খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রাহাতুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অংছিং মারমা। তাঁরা আগুনের ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং দুটি পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দেন। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ২৫ কেজি চাল, নগদ ৫ হাজার টাকা ও কম্বল বিতরণ করা হয়।
দুটি ঘরে আগুন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোর চারটায় আগুনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। দুটি ঘরের বাইরে দরজায় হুক দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন দুর্বৃত্তরা। ঘরের বেড়া কেটে বাসিন্দারা বের হয়েছেন। আমরা দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে রাউজান পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেউয়াপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি ঘরে দরজায় তালা লাগিয়ে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আগের দিন বৃহস্পতিবার সদর ইউনিয়নের কেউটিয়া বড়ুয়াপাড়া গ্রামেও সাধন বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তির ঘরে একইভাবে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। দুটি ঘটনায় থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে।