বগুড়ায় স্কুলছাত্র ফাহিম হত্যার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই আদালতে একজনের স্বীকারোক্তি

ফাহিম হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া নির্মাণশ্রমিক মো. রাব্বী
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় স্কুলছাত্র মো. ফাহিম (১৮) হত্যার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই গ্রেপ্তার এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে মো. রাব্বী (১৯) নামের ওই আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। বগুড়া আদালত পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জবানবন্দিতে রাব্বী বলেন, ফাহিমের সহপাঠী তরিকুল ইসলাম ফাহিমকে হত্যায় তাঁদের ভাড়া করেন। তরিকুলের কাছ থেকে ৫০০ টাকা কেড়ে নেওয়ার জেরে ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বগুড়া শহরের কলোনি এলাকার সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে ফাহিমকে হত্যা করা হয়। ফাহিম শহরের ফয়জুল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র এবং চকফরিদ কলোনি এলাকার মো. ফরহাদ হোসেনের ছেলে।

অপর দিকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মো. রাব্বী বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হরিখালি ইউনিয়নের সাতগ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে। রাব্বী পেশায় নির্মাণশ্রমিক। তিনি মা-বাবার সঙ্গে শহরের চকফরিদ কলোনি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফাহিমের বাবা ফরহাদ হোসেন গতকাল রাতে বগুড়া সদর থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এতে রাব্বীর নামও উল্লেখ করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন লতিফপুর কলোনি এলাকার মো. সীমান্ত (২১), লতিফপুর কলোনি এলাকার তরিকুল ইসলাম (১৯), গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জিরাগ্রামের জাকির হোসেন (২০) এবং শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া গ্রামের শ্রাবণ (১৯)। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও চারজনকে।

নিহত স্কুলশিক্ষার্থী মো. ফাহিম

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শহরের বনানী ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ফজলে এলাহী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতেই তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে মামলার ২ নম্বর আসামি মো. রাব্বীকে চকফরিদ কলোনি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাব্বী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করতে রাজি হওয়ায় তাঁকে আজ বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

রাব্বী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে ৬ ফেব্রুয়ারি ফাহিম সহপাঠী তরিকুলের কাছ থেকে ৫০০ টাকা কেড়ে নেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সহপাঠী ফাহিমের ওপর বদলা নিতে তরিকুল বন্ধুদের ভাড়া করেন। তরিকুলের হয়ে সীমান্ত, রাব্বীসহ কয়েকজন গতকাল সন্ধ্যায় ফাহিমকে একা পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।

তবে ফাহিমের বাবা হত্যা মামলার এজাহারে ভিন্ন কথা বলেছেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় চার মাস পূর্বে স্কুল চলাকালে ফাহিম স্কুলের শৌচাগার থেকে বের হয়ে দেখেন, একজন ছাত্রীর হাত ধরে শৌচাগারের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাটানি করছেন বিদ্যালয়ের এক ছাত্র। বিষয়টি শিক্ষকদের জানালে ওই ছাত্রকে শিক্ষকেরা শাসন করেন। এ ঘটনার জেরে আসামিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে গতকাল সন্ধ্যায় বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে ফাহিমকে ডেকে নেন। ফাহিম সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ফটকে উপস্থিত হলে আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ফাহিমকে কিল–ঘুষি মেরে বালুর ঢিবিতে ফেলে দেন। এজাহারনামীয় আসামি সীমান্ত তাঁর হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে ফাহিমকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। অন্যরা হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন। গুরুতর জখম অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

বগুড়া আদালত পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ফাহিম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি মো. রাব্বী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করার পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।