
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদায় আবারও কার্পজাতীয় দুটি মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ভাটার পানিতে ভেসে আসা মা মাছ দুটি কাতলা বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। ময়নাতদন্তের জন্য মাছ দুটি হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আজ রোববার সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাস মুন্সিরহাট এলাকার নদী থেকে মাছ দুটি উদ্ধার করেন নদীর স্বেচ্ছাসেবক ও নৌ পুলিশের সদস্যরা। উদ্ধার হওয়া মাছ দুটির প্রতিটির ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
এর আগে গত ১৫ মে রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে ১০ কেজি ওজনের মরা মা মৃগেল উদ্ধার করা হয়। মাছটির পেট ডিমে ভরা ছিল বলে জানায় মৎস্য অধিদপ্তর। উদ্ধার হওয়া মাছের শরীরে ধারালো কিছুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া একই স্থান থেকে গত ৪ মে পাঁচ কেজি ওজনের আরেকটি মরা মা কাতলা মাছ উদ্ধার করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এ ছাড়া গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে ১২ দিনে ছয়টি বড় মা মাছ ও তিনটি ডলফিন মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটে।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, মাছ দুটি উদ্ধার করে ল্যাবে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দূষণের ফলে অক্সিজেনস্বল্পতার কারণে মা মাছ দুটির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এবার কোরবানির ঈদের পর ফটিকছড়ির তেরপালি খালে চামড়া ফেলা হয়। এ ছাড়া কাঁঠালিয়া খাল দিয়ে ট্যানারির ময়লা পানি নদীতে এসে পড়ছে। এ কারণে নদীতে দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে নদীতে একের পর এক মরা মা মাছ ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তবে সব মা মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কারণ, সব সময় স্বেচ্ছাসেবীরা থাকেন না। প্রায় সময় মৃত মাছ জোয়ারে ভেসে চলে যায়। হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। এ ছাড়া নদীর হাটহাজারীর রাম দাশ মুন্সিরহাট অংশে একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। তবে এরপরও মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় লোকজন জানান, নৌ পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় নদীতে জাল পাতা, মাছ শিকারসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাশ মুন্সিরহাটের হালদা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর সপ্তাহে কয়েকবার অভিযান চালায়। তারা নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করেন। সিসিটিভির ফুটেজে কোনো অবৈধ কার্যক্রম চোখে পড়লে তাঁরা নদীতে নামেন। তবে হালদাকে শতভাগ সুরক্ষিত রাখতে গেলে স্পিডবোটের জ্বালানি বরাদ্দ এবং জনবলে বাড়াতে হবে।
এদিকে হালদায় গত ২৭ ও ৩০ মে দুই দফায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। এবার মোট ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেন আহরণকারীরা। নদীতে মা মাছ মরার এমন দুঃসংবাদে উদ্বিগ্ন নদী–গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, গত বছরের মতো একের পর এক মা মাছ মরা উদ্বেগের। কারণ, হালদার একেকটা মা মাছের ডিম থেকে প্রতিবছর কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নদী–গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুটি মাছ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরিতে আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মা মাছ দুটির মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।