
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় এক তরুণ অটোরিকশাচালককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিয়ে অটোরিকশাটি উদ্ধার করেন। তবে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার নারায়ণপুরের বাদামগাছতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তরুণের নাম শাওন সরকার (১৮)। তিনি উপজেলার উত্তর নলুয়া এলাকার ইকবাল সরকারের ছেলে। মা রোকসানা বেগমকে নিয়ে তিনি উপজেলা সদরের টিঅ্যান্ডটি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। কিছুদিন আগে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ভাড়া করা অটোরিকশা চালিয়ে চলত মা-ছেলের সংসার।
পরিবারের দাবি, উপজেলার নারায়ণপুর ও উত্তর নলুয়া এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি ও অটোরিকশাচালকের সঙ্গে টাকার লেনদেন নিয়ে শাওনের বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে শাওনের একাধিকবার কথা-কাটাকাটি হয়। ওই সময় তাঁরা শাওনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই বিরোধের যোগসূত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন।
কান্নার একপর্যায়ে রোকসানা বেগম বলেন, ‘ছেলেডারে পরিকল্পনা কইরা ওরা মাইরালাইছে। ছেলেডা খুন অইল। এহন আমি কী লইয়া বাঁচুম? আমার সব শেষ। ছেলেই ছিল আমার সবকিছু। ছেলের আয়েই সংসারের খরচ চলত। এহন সংসার কে চালাইব?’
এদিকে গতকাল রাতের ঘটনার বিষয়ে পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নারায়ণপুর বাজার এলাকা থেকে মাছুয়াখাল এলাকায় যাওয়ার জন্য রাত নয়টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত যাত্রীবেশে শাওনের অটোরিকশায় ওঠে। বাদামগাছতলা এলাকায় পৌঁছালে তারা নেমে যাওয়ার কথা বলে অটোরিকশাটি থামায়। সেখানে থামাতেই শাওনের মাথা, চোখ, মুখ, কপালসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা। একপর্যায়ে তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে যান। এ সময় অটোরিকশাটি নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরে লোকজন ধাওয়া দিলে তারা অটোরিকশাটি ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর শাওনকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহাম্মদ। তিনি বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। শাওনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।