রাকসু নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে
রাকসু নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে

রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে প্রশাসনের উদ্যোগে ‘নির্বাচনী বিতর্ক’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে ‘নির্বাচনী বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে আয়োজিত বিতর্কে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা অংশ নেন।

এবারের রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে লড়ছেন মোট ১৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্যানেলের মোট ৯ জন প্রার্থী বিতর্কে অংশ নেন। তাঁরা হলেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ), ‘রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের মেহেদী মারুফ, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের তাসিন খান, বামপন্থী ছাত্রসংগঠন-সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলের ফুয়াদ রাতুল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন–সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’ প্যানেলের মাহবুব আলম, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত ‘অপরাজেয় একাত্তর অপ্রতিরোধ্য চব্বিশ’ প্যানেলের মাসুদ কিবরিয়া, স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী নোমান ইমতিয়াজ ও আবদুর নূর।

বিতর্ক অনুষ্ঠানটি প্রেসিডেনশিয়াল টিভি ডিবেট ধরনে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিতর্কের চারটি পর্ব ছিল। প্রথম পর্বে প্রার্থীদের উদ্বোধনী বক্তব্য দিতে ২ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পলিসি পর্বে প্রার্থীরা তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ মিনিট সময় পান। তৃতীয় পর্বে প্রশ্নোত্তর ও চূড়ান্ত পর্বে ছিল সমাপনী বক্তব্য, যেখানে প্রার্থীদের ১ মিনিট সময় দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ফোরাম। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক পারভেজ আজহারুল হক (প্রিন্স)।

বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা তাঁদের মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি ও ইশতেহার ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক দলগুলো অরাজনৈতিক রাকসুকে রাজনৈতিকভাবে চিত্রিত করছে উল্লেখ করে উদ্বোধনী পর্বে স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী নোমান ইমতিয়াজ বলেন, ‘গঠনতান্ত্রিকভাবে রাকসু একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সেটিকে এমনভাবে চিত্রিত করেছে যে রাকসুকে আর অরাজনৈতিক সংগঠন বলা যাচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ, রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রশিবির-সমর্থিত জোট, ছাত্রদল-সমর্থিত জোটসহ অনেকে দলীয় সমর্থনে নির্বাচন করছে। তাহলে অবশ্যই বলতে হয়, তারা যেহেতু ট্যাগে নির্বাচন করছে, তার মানে এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য অথবা তাদের দলকে গতিশীল করার জন্য। আমাদের সবার উচিত, রাকসু যেহেতু একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, সেটা মেনেই কাজ করা।’

পলিসি পর্বে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান তাঁদের প্যানেলকে ‘ইনক্লুসিভ’ হিসেবে গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যে প্যানেলটি গঠন করেছি, সেটি একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল। চাইলে শুধু ছাত্রশিবিরের সদস্যদের নিয়েই প্যানেল গঠন করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি; বরং বিভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে প্যানেল দিয়েছি। আমাদের প্যানেলে যেমন জুলাই আন্দোলনে আহত যোদ্ধা আছেন, তেমনি আছেন নারী প্রার্থীও। আমরা যে ইশতেহার প্রকাশ করেছি, তা ১২ মাস মেয়াদি হলেও ৬ থেকে ৭ মাসেই অধিকাংশ লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।’

রাকসুকে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার হাতিয়ার হিসেবে মনে করেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল। বিতর্কে তিনি বলেন, ‘রাকসুকে আমরা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে দেখি। জুলাই আন্দোলনেও আমরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও দখলদারির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলাম। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন ও খাদ্যসংকট নিরসন, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সেল গঠন এবং রাকসুকে একটি ছায়া সংগঠন হিসেবে সক্রিয় রাখার উদ্যোগ নেব। আমাদের লক্ষ্য, একটি ভয়ভীতিহীন, গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ তৈরি করা।’