রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের পাটিয়াকান্দি উচ্চবিদ্যালয়ে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ ও জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চাঁদের পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), শিমুলিয়া গ্রামের বিএনপি কর্মী শাহজাহান আলী (৫২), যুবদল কর্মী সেলিম হোসেন (৩২), বিএনপি ও পাটিয়াকান্দি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজমুল আলী (৩১), পাটিয়াকান্দি ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পলাশ আলী (৩৫)।
অন্যদিকে আনোয়ার হোসেনের পক্ষের দুজন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন শিমুলিয়া গ্রামের শাহু সর্দার (৪৫) ও কাজিম উদ্দিন মোল্লা (৫৫)। আহত ব্যক্তিরা চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন জানান, বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ ও জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে প্রধান শিক্ষক জাকারিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আবু সাইদ চাঁদ পক্ষের লোকজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। তাঁরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগসূত্রতার অভিযোগ তুলে তাঁকে বিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তালা লাগিয়ে দেন। এর পর থেকে প্রধান শিক্ষক ১০ দিন ছুটি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাননি। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল। এ অবস্থায় ছুটি শেষে প্রধান শিক্ষক জাকারিয়া আজ সকালে পাশের গ্রামের কিছু লোকজন সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান। এ সময় স্থানীয় লোকজন বহিরাগত লোক নিয়ে আসার অভিযোগ তোলেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হলে একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে সাতজন আহত হন। এতে সরদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেন পক্ষের সাহাবুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
আহত স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট প্রধান শিক্ষক ৩০-৪০ জন বহিরাগত নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে স্থানীয় লোকজন বাধা দিলে তাঁরা হামলা চালালে আমাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হন। আমি অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম, তারপরও তাঁরা মেরেছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর জ্ঞান ফিরেছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জাকারিয়া বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করে কমিটির নির্বাচন দিয়েছিলাম, কিন্তু একটি পক্ষ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ে যেতে বাধা প্রদান করছে। বহিরাগত নন, কয়েকজন আত্মীয়স্বজন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা আমাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছেন।’
চারঘাট মডেল থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। স্থানীয় লোকজন প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।