বাগেরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর আয়োজনে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
বাগেরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর আয়োজনে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাটে জিপিএ-৫ উৎসব

সংগ্রাম, স্বপ্ন ও সাফল্যের গল্প বলল কৃতী শিক্ষার্থীরা

দীনা আক্তার ও তুর্কি হাওলাদার দুই ভাই–বোন। দুজনের বয়সের পার্থক্য ১ বছর ১১ দিন। ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে পড়াশোনা করে আসছে তারা। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার আট্টাকা কেরামত আলী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা। দীনা হতে চায় পাইলট আর তুর্কির স্বপ্ন প্রকৌশলী হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার বাগেরহাটে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় আসে ওই দুই ভাই–বোন। সঙ্গে ছিলেন তাদের বাবা। অনুষ্ঠানস্থল জেলা পরিষদ মিলনায়তন প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে দীনা ও তুর্কি একই সুরে বলছিল, ‘আয়োজনটা দুর্দান্ত ছিল। অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আশা করি, ভবিষ্যতে এসব দিকনির্দেশনা কাজে লাগাতে পারব।’

‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর আয়োজনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নানা আয়োজনে মেতেছিল বাগেরহাটের কৃতী শিক্ষার্থীরা। সকালে শুরু হওয়া ঝুম বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তারা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসে। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল ৩৪০ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের উপস্থিতিতে মুখর ছিল পুরো জেলা পরিষদ মিলনায়তন।

সকাল ১০টার দিকে মঞ্চে নিজেই গান গাইতে গাইতে হাজির হয় উপস্থাপক বন্ধুসভার বন্ধু কে এম বনি। সে এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরপরই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। এরপর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বাগেরহাট প্রতিনিধি সরদার ইনজামামুল হক। এরপর ‘সবুজ সাথী ড্যান্স টিম’ জিপিএ–৫ থিম সং পরিবেশন করে। ইউরোপের বাজারে কাঠের ঘর রপ্তানি করে পরিচিতি পাওয়া সফল উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘পড়ালেখার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের জ্ঞান অর্জন করা খুব দরকার। সারা জীবনটাই শেখার। শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করলে চলবে না। জীবনে সফলতার জন্য দুইটা জিনিস দরকার। লক্ষ্য নির্ধারণ করা আর চেষ্টা করা। দুটোর সমন্বয় থাকতে হবে। ওই শিক্ষা কোনো কাজে দেয় না, যেটা মানুষের উপকারে আসে না। তোমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকবে।’

এরপর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নানা রকম গেম ও বক্তব্যের মিশেলে এগিয়ে যায় অনুষ্ঠান। উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যানিকেতনের অথৈ ও অদ্রিতার একাধিক নৃত্য পরিবেশন সবাইকে মুগ্ধ করে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খান সালেহ আহমেদ বলেন, ‘জীবনের প্রথম বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তোমরা ভালো করেছ। আগামী দিনে এটা ধরে রাখতে হবে। তোমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাও, এটাই প্রত্যাশা করি। ধৈর্য, সততার সঙ্গে থাকলে জীবনে বড় হতে পারবে। কর্মক্ষেত্রে তুমি যা–ই করো না কেন, ভালো মানুষ হওয়াটাই আসল কথা।’

প্রথম আলোর নানা ইতিবাচক উদ্যোগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর খুলনা প্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘তোমরাই সামনে দেশের নেতৃত্ব দেবে। তোমরা নিজেদের ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করো। গুজব এড়িয়ে সত্য তথ্য জানতে নিয়মিত প্রথম আলো পত্রিকা, প্রথম আলো অনলাইন পড়বে। বিজ্ঞানচিন্তা, কিশোর আলো পড়বে, ভালো ভালো বই পড়বে। এই যুগে আমরা কেউ প্রযুক্তিকে এড়িয়ে চলতে পারব না, তবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিয়ে তোমাদের আরও সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তির বিপদটাও ঠিকভাবে বুঝতে হবে।’

বাগেরহাট বন্ধুসভার উপদেষ্টা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বকসী উপস্থিত সবাইকে মিথ্যা, মুখস্থবিদ্যা ও মাদকের বিরুদ্ধে শপথ পাঠ করান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যের পাশাপাশি ছিল নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

একপর্যায়ে মঞ্চে অনুভূতি ব্যক্ত করতে আসে রামপালের চাঁদপুর গ্রাম থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সুরাইয়া খাতুন। সে বলে, ‘আমাদের পরিবার থেকে আমিই প্রথম এসএসসি পাস করলাম। ছোটবেলা থেকে বেশ কয়েকবার পরিবার থেকে বিয়ে দেওয়ার চাপ ছিল। নিজের বাল্যবিবাহ নিজেই ঠেকিয়েছি।’ প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসএসসি পর্যন্ত আসার নানা সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলে সে। সুরাইয়া জানায়, কেবল নিজের বাল্যবিবাহই নয়, গ্রামের আরও ১২টি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছে সে।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মঞ্চে আসেন শিল্পী বেলাল বাদশা। তাঁর পরিবেশনায় মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। একেবারে শেষের দিকে কুইজ বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার হিসেবে বই তুলে দেন অতিথিরা। বাগেরহাট বন্ধুসভার সভাপতি মাহমুদ হোসেন (শোভন) ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় ছিল কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।