
ভোরের কুয়াশা কাটতেই ময়মনসিংহ টাউন হলের মাঠে জড়ো হতে থাকেন কৃতী শিক্ষার্থীরা ও তাঁদের অভিভাবকেরা। শীত উপেক্ষা করে আজ বুধবার সকালে কেউ দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, কেউ এসেছেন পাশের মহল্লা থেকে। তবু সবার মুখে একই রকমের আনন্দ আর রঙিন স্বপ্নের ঝলকানি। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো জিপিএ-৫ কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব-২০২৫-এ ময়মনসিংহে এমন দৃশ্য দেখা যায় সকালজুড়ে।
স্কুলশিক্ষক আবুল কালামও ছেলে আবু সাঈদকে নিয়ে সকাল আটটার মধ্যে পৌঁছে যান অনুষ্ঠানস্থলে। এরপর ঘুরে দেখেন বিভিন্ন স্টল, ছেলের সাফল্যের স্মৃতি ধরে রাখতে তোলেন সেলফিও। নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন আবু সাঈদ। কথা বলে জানা যায়, তিনি স্বপ্ন দেখছেন বিচারক হওয়ার। স্বপ্নবাজ এমন শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনের শুরু থেকেই ময়মনসিংহ টাউন হলের মাঠ উৎসবে রূপ নেয়।
জামালপুরের তাসনিম সুলতানাও এসেছেন মা জহুরা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর বাবা নেই। ব্যাংক কর্মকর্তা বাবার পেনশনের টাকায় তিন ভাইবোনের পড়ালেখা চালান মা। তাসনিম বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন। মা স্বপ্ন দেখেন, মেয়ে একদিন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে। জহুরা খাতুন বলেন, ‘মেয়েকে ডাক্তার বানাব, সেই স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে এই শহরে থাকি। মেয়ে মন দিয়ে পড়ছে। কষ্ট সার্থক হবে ইনশা আল্লাহ।’
জামালপুরের মেলান্দহের সুমাইয়া আক্তার আর ময়মনসিংহের তারাকান্দার আফসানা সানজিলার দেখা হয় টাউন হল মাঠে। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির গল্প করতে করতেই সেখানে দুজনের বন্ধুত্ব হয়। দুজনে একসঙ্গে তোলেন সেলফিও। কথায় কথায় জানা গেল, সুমাইয়া চান চিকিৎসক হতে, আর আফসানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতা করতে চান।
‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, একসাথে’ প্রতিপাদ্যে সারা দেশের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই উৎসবের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। চট্টগ্রাম, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর পর আজ বুধবার ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আয়োজন। অন্য বিভাগগুলোয়ও পরে এমন আয়োজন করা হবে। উৎসবের পৃষ্ঠপোষক প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি। এ আয়োজনের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। অংশ নিতে নিবন্ধন করতে হবে এই লিংকে www.hscgpa5fest.com ।
আনন্দ মোহন কলেজের সাদি আহমেদ আর সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের খালিদ সাইফুল্লাহ। দুজনেরই ভর্তি পরীক্ষার চাপে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। আজ উৎসবটি তাঁদের সেই আড্ডার সুযোগ করে দিয়েছে যেন। দুজনই জানান, এসএসসির পরও প্রথম আলোর সংবর্ধনায় অংশ নিয়েছিল, এবারও তাঁদের একই রকম উচ্ছ্বাস। এ জন্য প্রথম আলোকে বিশেষ ধন্যবাদ দিতে ভুললেন না তাঁরা।
অনুষ্ঠানে দেখা হয় জেরিন, নিশাত ও নুসরাতেরও। তিনজনই এবার ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে পাস করেছেন। ব্যস্ততার কারণে অনেক দিন পরস্পরের দেখা হয়নি। আজ তাই ফলাফল–পরবর্তী প্রথম সাক্ষাতে জড়িয়ে ধরেন একে-অপরকে। উচ্ছ্বসিত গলায় নিশাত বলেন, ‘আজকের সকালটা খুব ভালো লাগছে। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো।’
সকাল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাউন হলের মাঠ ভরে উঠতে থাকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণে। কেউ ক্রেস্ট ও স্ন্যাকস সংগ্রহ করছেন, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। পাশে বোর্ডে নিজের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য লিখে রাখছেন কেউ—মেডিকেলে পড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বৃত্তি নিয়ে বিদেশে যাওয়া বা শুধু ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার প্রত্যাশার কথা।