আমের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। দাম বাড়লেও চলছে বেচাকেনা। গতকাল নগরের কদমতলী স্টেশন রোড এলাকার ফলমন্ডিতে
আমের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। দাম বাড়লেও চলছে বেচাকেনা। গতকাল নগরের কদমতলী স্টেশন রোড এলাকার ফলমন্ডিতে

শেষ সময়ে বাজারে কোন আম পাওয়া যাচ্ছে, দাম কেমন

চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোডের ফলমন্ডিতে আমের আড়ত আছে শফিউল আজমের। দূরের জেলা নওগাঁয় প্রায় আড়াই শ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে তিনি আমের বাগান করেছেন। গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গোসহ নানা জাতের আমের চাষ এসব বাগানে। এখন বেচাকেনা কমে এসেছে। পাঁচ জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে তাঁর আড়তে।

গতকাল শনিবার দুপুরে শফিউল আজমের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা অলস বসে আছেন। বেচাকেনা কম। থরে থরে আম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এই আড়তদার জানান, এখন মৌসুমের শেষ সময়। আর মাসখানেক আম থাকবে বাজারে। এরপর বেচাকেনা কমে যাবে। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, রুপালি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো। আম্রপালির দাম পড়ছে পাইকারিতে ৯০ থেকে ১২০ টাকা, বারি-৪ ৬৫ থেকে ৮০, রুপালি ৬০ থেকে ১০০, ফজলি ৬০ থেকে ৮০ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।

আমের বাজার পরিস্থিতি কেমন, এমন প্রশ্নে শফিউল আজম বলেন, শুরু থেকেই আমের দাম এবার কম ছিল। পাইকারিতে প্রতি কেজি ৩০ টাকা পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। জেলা পর্যায়ে দাম ছিল আরও কম। তবে দাম এখন একটু বেড়েছে। তবু খরচের টাকা উঠছে না।

আমের বেচাকেনায় খরচের একটা হিসাব দেন শফিউল আজম। তিনি জানান, ১৫ বছরের জন্য তিনি বাগান ইজারা নিয়েছেন। বছরজুড়ে বাগানে খরচ হয়। শ্রমিকের মজুরি, বীজ, সার—সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় গড়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা থেকে গড়ে ৭০ হাজার টাকা তুলে আনার চেষ্টা থাকে। এ বছর প্রতি বিঘায় ৪০ হাজার টাকার বেশি উঠবে না। প্রায় সব আড়তদারের অবস্থা একই।

দেশের যত আম উৎপাদিত হয়, এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ আম্রপালি। এবারের অনুকূল আবহাওয়ায় এ জাতের আমের উৎপাদন বেশি হয়েছে বলে জানান শফিউল আজম। তিনি বলেন, এবার আম্রপালির উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে প্রচুর আম নষ্টও হয়েছে। কেননা, এবার শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি কম হয়েছে।

দেশের সর্বত্র আমের চাষ হয়। তবে উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দক্ষিণ-পশ্চিমের সাতক্ষীরা ও মেহেরপুর এবং পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে আমের উৎপাদন বেশি। এসব জেলা থেকে আম এসে পৌঁছায় ফলমন্ডির আমের আড়তগুলোতে। আড়তদারেরা মিশ্র পদ্ধতিতে ব্যবসা করেন। কেউ কেউ নিজেরাই জমি ইজারা নিয়ে বাগান করেন। কেউ আবার বাগানমালিকের কাছ থেকে কিনে নেন। উপজেলা ও শহরের খুচরা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা ফলমন্ডি থেকে কিনে নেন নানা জাতের আম।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আমের মৌসুম থাকে প্রায় পাঁচ মাস। এর মধ্যে জুন ও জুলাই মাসে আমের বাজার রমরমা থাকে। ১৫ মে থেকে উন্নত জাতের আমের মৌসুম শুরু হয়। এ সময় গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ আসতে থাকে। ধাপে ধাপে বাজারে আসে আম্রপালি, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙার মতো আম। বাজারে বিক্রিবাট্টা চলে আগস্ট মাস পর্যন্ত। আগামী এক মাসে মোহনভোগ, আশ্বিনা, গৌরমতি, চোষা, বারি-৪, ফজলি; এই আমগুলো পাওয়া যাবে। এ সময়ের মধ্যে আম্রপালি, রুপালি উঠে যাবে।

ট্রাকে ট্রাকে আসছে আম

গতকাল ফলমন্ডিতে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, ট্রাকে ট্রাকে আম ঢুকছে। শ্রমিকেরা আমের ঝুড়ি নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আড়তে। আড়তগুলোতে চলছিল দর-কষাকষি। এখন শেষ মুহূর্তে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, রুপালি আসছে। আশ্বিনাও পাওয়া যাচ্ছে টুকটাক। গাউছিয়া ফলবিতানের কর্ণধার মোহাম্মদ আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, আমের উৎপাদন ভালো হওয়ার কারণে ভোক্তারা কম দামে আম পেয়েছেন। তবে আড়তদার ও বাগানমালিকেরা লোকসান গুনেছে।

কথা হলো পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ রফিকের সঙ্গে। তিনি নগরের কর্নেলহাট এলাকায় ফলের দোকান চালান। রফিক বলেন, বাজারে আমের চাহিদা আছে। এ কারণে তিনি ১০০ কেজি আম্রপালি কিনেছেন। প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে পড়েছে। তিনি পরিবহন খরচসহ ধরে ১০০ বা ১০৫ টাকায় বিক্রি করবেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে পাওয়া গেল স্টেশন রোডে একটি ফলের দোকানের সামনে। তিনি আম কিনছিলেন। জাহিদুল বলেন, তিন দিনের ব্যবধানে আমের দাম কেজিতে অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে। যেমন গত বুধবার তিনি পাঁচ কেজি আম্রপালি কেনেন। প্রতি কেজির দাম পড়ে ৯০ টাকা। কিন্তু গতকাল কিনেছেন ১১০ টাকা কেজি দরে।

খুচরা বিক্রেতা আরমান মিয়া জানান, তিনি বারি-৪ জাতের আম বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৮০ টাকা কেজি দরে, ফজলির দাম পড়ছে ৯০ টাকা, আম্রপালি ১০০ থেকে ১২০, ব্যানানা ম্যাঙ্গোর দাম পড়ছে ১৫০ টাকা। গত তিন দিনের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রেতা কমেনি।