উচ্চ আদালতে পাঁচ মামলায় জামিন পাওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাসহ আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর (শোন অ্যারেস্ট) আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের পৃথক দুটি আদালতে এ আবেদন করা হয়। আদালত ১৩ নভেম্বর এ আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ্ আল মাসুমের আদালতে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনউদ্দিন কাদিরের আদালতে আবদুর রহমান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন গ্রহণ করে ১৩ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। এর আগে গত রোববার (৯ নভেম্বর) উচ্চ আদালত থেকে পাঁচ মামলায় জামিন পান তিনি। পাঁচ মামলার মধ্যে হত্যার অভিযোগে তিনটি ও মারাত্মক জখমের অভিযোগ করা দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিন মামলায় জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করে, যা আজ সোমবার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ‘নট টুডে’ (আজ নয়) রাখেন। ফলে আপিলের শুনানি পরে অনুষ্ঠিত হবে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী প্রথম আলোকে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিতে ব্যবসায়ী আবদুর রহমান নিহতের ঘটনায় তাঁর ছেলে ফয়সাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় রোববার বিকেলে আইভীকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইভীর আইনজীবী আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় সাবেক মেয়র আইভী ছয় মাসের অধিক সময় ধরে জেলহাজতে আটক আছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের একজন পরিচ্ছিন্ন, সৎ এবং আদর্শবাদী মেয়র ও রাজনীতিক। উচ্চ আদালত পাঁচটি মামলায় তাঁর জামিন দেওয়ার পর বিরোধী পক্ষ তাঁকে হয়রানি করার জন্য তৎপর আছে। তাঁকে মিথ্যা মামলায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুলাই সদর উপজেলার ভুঁইগড় এলাকায় আবদুর রহমান হত্যা মামলায় ২২৮ জনকে এজাহারভুক্ত করে অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ওই মামলায় আইভী এজাহারভুক্ত আসামি নন। তাঁকে তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছেন। অপর দিকে, গত ৯ মে আইভীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার মামলায় পুলিশের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে নগরের দেওভোগের বাড়ি থেকে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আইভীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। গত বছরের ২০ জুলাই পোশাককর্মী মিনারুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর থেকে আইভী কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে তাঁকে অব্যাহতি দেন।