
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় চুরির অপবাদ দিয়ে মো. ফোরকান মিয়া (৩৫) নামের এক ফেরিওয়ালাকে পিটিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দুজন। শনিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (চতুর্থ আদালত) আফনান সুমী তাঁদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন।
নিহত ফোরকান উপজেলার আসাদনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার মাতুর বাড়ির মোড় এলাকায় একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করতেন এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে হাঁড়িপাতিল বিক্রি করতেন।
হত্যার দায় স্বীকার করে যে দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তাঁরা হলেন উপজেলার আসাদনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম (৪৪) ও তাঁর আপন চাচাতো ভাই উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের রিমন মিয়া (২৮)। এ ঘটনায় জড়িত মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত বাকি দুজন হলেন উপজেলার আসাদনগর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (১৮) ও গ্রেপ্তার শফিকুলের ভাতিজা মো. হৃদয় (১৯)।
নিহতের পরিবার ও আসামিদের বরাতে পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার বিকেলে রিমন ও হৃদয় চুরির অপবাদে ফোরকানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। উপজেলার আসানগর এলাকায় শফিকুলের গ্যারেজের পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে শফিকুল, তাঁর ভাতিজা শহিনুর, জাহিদুল ও নিহত ব্যক্তির আপন চাচাতো ভাই রিমন ফোরকানকে বেঁধে রাখেন। সেখানে ফোরকানকে নির্যাতন ও মারধর করা হয়। পরে রাত সোয়া ১০টার দিকে তাঁরা ফোরকানকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসককে জানান মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনি আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফোরকানকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে থানা–পুলিশের কয়েকজন সদস্য ও ফোরকানের পরিবারের লোকজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছান। বিষয়টি সন্দেহ হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁরা চুরির অপবাদে মারধর করে হত্যার দায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।
এদিন রাতেই নিহত ফোরকানের স্ত্রী শারমিন আক্তার বাদী হয়ে শফিকুল, শাহিনুর, জাহিদুল ও রিমনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। শনিবার বিকেলে গ্যারেজের মালিক শফিকুল ও রিমন হত্যার দায় স্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন।
ফোরকানের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানান, স্বামীকে মারধরের এক পর্যায়ে আসামিরা তাঁকে মুঠোফোনে কল করেন। স্বামীর আর্তচিৎকার শোনান।
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন প্রথম আলোকে বলেন, রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসককে জানান আসামিরা। কিন্তু নিহতের শরীরের আঘাত দেখে মনে হয়নি এটি মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।