দুজন যাত্রীকে স্পিডবোট থেকে ঘাটে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট এলাকায়
দুজন যাত্রীকে স্পিডবোট থেকে ঘাটে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট এলাকায়

কাঁধে-কোলে করে যাত্রীদের নৌযানে তোলেন তাঁরা

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে প্রতিদিনই দেখা মেলে এই দৃশ্যের। ভাটার সময় যাত্রীদের টাকার বিনিময়ে এভাবেই নৌযানে আনা-নেওয়া করেন একদল শ্রমিক।

অদূরে ভেড়া নৌযান থেকে একের পর এক কোলে-কাঁধে করে পাড়ে নিয়ে আসা হচ্ছে যাত্রীদের। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, কোনো দুর্যোগের কবল থেকে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে। যদিও সত্যি হলো, গায়ে কাদা না লাগাতেই অন্যের কাঁধে-কোলে চড়ে বসেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে প্রতিদিনই দেখা মেলে এই দৃশ্যের। ভাটার সময় যাত্রীদের টাকার বিনিময়ে এভাবেই নৌযানে আনা-নেওয়া করেন একদল শ্রমিক।

গত শনিবার গুপ্তছড়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের নৌযানে আনা-নেওয়ার প্রায় ১৫ জন শ্রমিক জেটিতে অবস্থান করছেন। তাঁদের কেউ জেটির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে পার করছিলেন অলস সময়। দুজন দাঁড়িয়ে ছিলেন জেটি থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। কাউকে ঘাটে দেখলেই নৌযানে যাবেন কি না, জানতে চাচ্ছেন।

শ্রমিকদের কয়েকজনের সঙ্গে ঘাটে কথা হয়। তাঁরা জানান, তাঁদের অনেকেই ফাইবারের তৈরি ছোট নৌযান লাল বোটের শ্রমিক। বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ এমভি মালঞ্চ থেকে জেটিতে যাত্রী ওঠানামা করে লাল বোট। তবে জাহাজটি কেবল একবার আসা–যাওয়া করে ঘাটে, যার কারণে তাঁদের বাকি সময়টা অলস কাটত। তবে গত বছর থেকে ভাটার সময় স্পিডবোটের যাত্রীদের পার করে বাড়তি উপার্জন করছেন তাঁরা।

আগে বর্ষা মৌসুম শেষে কাদামাটির এই পথে কাঠের সেতু নির্মাণ করতেন ইজারাদার। তখন ভাটার সময় সেই সেতু দিয়েই যাত্রীরা পারাপার করতেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর ইজারাদারের পরিবর্তন হয়েছে। এর পর থেকে কাঠের সেতু নির্মাণ না করায় যাত্রীদের কাদা ও পানি মাড়িয়ে স্পিডবোটে ওঠানামা করতে হচ্ছে।

আগে বর্ষা মৌসুম শেষে কাদামাটির এই পথে কাঠের সেতু নির্মাণ করতেন ইজারাদার। তখন ভাটার সময় সেই সেতু দিয়েই যাত্রীরা পারাপার করতেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর ইজারাদারের পরিবর্তন হয়েছে। এর পর থেকে কাঠের সেতু নির্মাণ না করায় যাত্রীদের কাদা ও পানি মাড়িয়ে স্পিডবোটে ওঠানামা করতে হচ্ছে।

শ্রমিকেরা জানান, সাধারণত একজন যাত্রী চেয়ারে বসার ভঙ্গিতে দুজন শ্রমিকের হাত ও কাঁধের ওপর কাদামাটির এই পথ পার হন। তবে পারাপারের সুবিধার্থে অনেক যাত্রীকে কাঁধে তুলে পার করা হয়। শিশু-কিশোরদের পাঁজাকোলা করে পার করিয়ে দেন শ্রমিকেরা।

কাঁধে করে এক যাত্রীকে ঘাটে নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা

মো. রুবেল (২৪) নামের এক শ্রমিক বলেন, ভাটার সময় যাত্রী কম থাকে। এরপরও এভাবে যাত্রী পারাপার করে লাল বোটের মাসিক বেতনের বাইরে দিনে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তাঁর। তিনি বলেন, অনেকে গায়ে কাদা না লাগাতে তাঁদের সেবা নেন। তবে রোগী ও বয়স্ক লোকজনের এই পথ পাড়ি দেওয়ার মতো শক্তি থাকে না। তাই তাঁদের ডাক পড়ে।

জাহাজ, ফেরি, স্পিডবোটসহ আধুনিক নৌযান থাকলেও যাত্রীদের ঘাটে তোলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ইজারাদারেরাও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ফলে মানুষের কাঁধই ভরসা হয়ে উঠেছে যাত্রীদের।
ওমর ফয়সাল, সন্দ্বীপের বাসিন্দা

৪০০ টাকার বিনিময়ে এক ব্যক্তিকে স্পিডবোটে তুলে দিয়ে ফিরছিলেন মো. জহির (৩৮) ও মো. ফিরোজ (২৮) নামের দুই শ্রমিক। জহির বলেন, ‘ভাডা অইলেও হানি বেশি নামে ন। ঘণ্টাখানেক পরে অইলে বকশিশ অইবো ৫০০ টিয়া।’

গত ২৬ অক্টোবর এক নারী যাত্রী প্রায় এক কিলোমিটার কাদা মাড়িয়ে স্পিডবোটের কাছাকাছি গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান কাদায়। তিন কিশোর তাঁকে দুই হাত ধরে টেনে স্পিডবোটের কাছে নিয়ে যান। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এভাবে কাদা–পানি মাড়িয়ে স্পিডবোটে উঠতে হয় যাত্রীদের। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গুপ্তছাড়া ঘাট এলাকা থেকে তোলা

ওমর ফয়সাল নামে সন্দ্বীপের এক বাসিন্দা বলেন, ‘জাহাজ, ফেরি, স্পিডবোটসহ আধুনিক নৌযান থাকলেও যাত্রীদের ঘাটে তোলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ইজারাদারেরাও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ফলে মানুষের কাঁধই ভরসা হয়ে উঠেছে যাত্রীদের।’

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) নয়ন শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ইজারাদার নিজের খরচে কাঠের সরু পাটাতন তৈরি করে দিতেন বলে দুর্ভোগ চোখে পড়ত না। এখন আমরা চাচ্ছি খননকাজ সম্পন্ন হলে ফেরির পন্টুনে স্পিডবোট ভেড়ানোর সুযোগ দিতে, তাহলে এই দুর্ভোগ আর থাকবে না।’