চুরির অভিযোগে মারধরের পর কান ধরে ঘোরানো হলো ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মুঠোফোন চুরির অভিযোগে মারধর ও কান ধরে পুরো বাজার ঘোরানো হয়েছে ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধকে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার কালামৃধা বাজারে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় মুঠোফোন চুরির অভিযোগে মারধর ও কান ধরে পুরো বাজার ঘোরানো হয়েছে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের কালামৃধা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটা ভিডিও রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই।

ভিডিওতে দেখা যায়, বাজারে পাঁচ-ছয়জন যুবক লাঠি হাতে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে ঘিরে রেখেছেন। ওই বৃদ্ধ কান ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ সময় বৃদ্ধকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে উপস্থিত লোকজন কটূক্তি করতে থাকেন। একপর্যায়ে বৃদ্ধের হাতের ঘড়ি খুলে এক যুবক বৃদ্ধের পকেটে রাখেন। বৃদ্ধ পুরো সময় কান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বৃদ্ধ তাঁর বাড়ির ঠিকানা বলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মহিলা রোড। এরপর ওই বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ‘চোর চোর’ স্লোগান দিয়ে বাজার ঘোরানো শুরু করেন ওই যুবকেরা। কয়েকজন হাতের লাঠি দিয়ে তাঁকে আঘাতও করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালামৃধা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, রোববার সকাল ১০টার দিকে তরকারি বাজারে এক ক্রেতা সবজি কিনছিলেন। তখন ওই ক্রেতার মুঠোফোনটি এই বৃদ্ধ লোকটি চুরি করে নিয়ে যান। পরে বাজারের লোকজন ওই বৃদ্ধের কাছ থেকে মুঠোফোনটি উদ্ধার করেন। এরপর তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। পরে বৃদ্ধকে কান ধরে পুরো বাজার ঘুরিয়ে ছেড়ে দেন লোকজন।

কালামৃধা বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিন্টু আকন বলেন, ‘আমি রোববার সকালে বাজারে ছিলাম না। রোববার বিকেলে এসে শুনেছি ওই মুরব্বি বাজার থেকে ৪টি মোবাইল ও ২ হাজার ২০০ টাকা চুরি করেছেন। মাছ বাজারে একজনের পকেট কাটতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। এরপর চুরির কথা স্বীকার করেছেন। এরপর বাজারের কয়েকজন দোকানদার বাজার ঘুরিয়ে তাঁকে চোর হিসেবে সবার কাছে পরিচিত করান। এ সময় বৃদ্ধ নিজের কান নিজে ধরে “আমি চোর, আমি চোর” বলে বাজার ঘুরেছেন।’

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সরকারি কাজী মাহবুব উল্লাহ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসায়েদ হোসেন ঢালী বলেন, ‘ওই বৃদ্ধের অপরাধ করা ঠিক হয়নি। তবে প্রবীণ হিসেবে ওই লোকের প্রতি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত ছিল। পাশাপাশি তাঁকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করাও ঠিক হয়নি। যাঁরা বৃদ্ধ একজন লোককে এমনভাবে হেয় করেছেন, তাঁরাও অপরাধী। তাঁদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।’
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকসেদুর রহমান বলেন, ‘আমি ভিডিওটা দেখি নাই এবং এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করে নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’