
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম বদল করে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪’, শেখ হাসিনা হলের নাম বদলে করে ‘কবি সুফিয়া কামাল হল’ এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বদল করে ‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার’ রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা এই দুটি হল ও গ্রন্থাগারটির সামনে ব্যানার টাঙিয়ে দেন।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন নিয়ে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে হলটির আবাসিক ছাত্রীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের মতামতকে উপেক্ষা করে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম বদলের আবেদনের অফিস আদেশে সহ–উপাচার্য স্বাক্ষর দেওয়া নিয়ে গতকাল রাত ৯টার দিকে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা দুটি হল ও গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তন করে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছেন। তবে গতকাল রাতে ছাত্রীদের যে বিক্ষোভ হয়েছে, সেটা ভুল–বোঝাবুঝি থেকে। সহউপাচার্য কোনো অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেননি। তিনি কেবল একটি স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন এবং এর একটি কপি দিয়েছেন। এটাকে ভুলভাবে নিয়ে ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেছেন। এটা পরে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। যা কিছুই করা হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সেভাবেই এসব কাজ এগোচ্ছে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মতামতকে উপেক্ষা করে কে বা কারা নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছেন, তাঁরা তা জানেন না। হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা তিনটি নাম প্রস্তাব করেছিলেন। নামগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতামত জরিপ হলেও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। এর আগেই হুট করে একটি পক্ষ নাম বদলের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁরা উপাচার্যের কাছে জানতে এসেছেন, শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে সহ–উপাচার্য কীভাবে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তনের অফিস আদেশে স্বাক্ষর করলেন। তাঁদের চাওয়া এই হলের নাম অপরিবর্তিত থাকবে। কারও প্ররোচনায় কিছু হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা নাম পরিবর্তন করে ব্যানার টানান। পরে বেলা তিনটার দিকে উপাচার্য ও আমার কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। আমি এটি রিসিভ করেছি মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্থাপনার নাম পরিবর্তন করতে হলে তা সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হয়। সিন্ডিকেট সভায় সভাপতি হিসেবে উপাচার্য নাম পরিবর্তনের বিষয়টি অ্যাজেন্ডাভুক্ত করলে, তবে আলোচনার মাধ্যমে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তনের দাবি তোলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিসম্বেরের প্রথম সপ্তাহে একটি হলের প্রাধাক্ষ মেহেদী হাসানকে প্রধান করে শিক্ষক, হল প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীদের ১০ জন প্রতিনিধি নিয়ে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমত হয়ে প্রত্যেকটি স্থাপনার দুটি করে নাম প্রস্তাব করবেন। এর পর সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। কমিটি এখনো তাদের প্রতিবেদন দেয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে দুটি হল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তন করে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি, তাঁদের মতামত না নিয়ে একটি পক্ষ গতকাল বিকেলে এই হলের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন। এতে জুলাই বিপ্লবের দুই শহীদ নাফিসা ও রিয়া গোপের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু হলের শিক্ষার্থীরা তিনটি নাম প্রস্তাব করে ভোটাভুটি করেছিলেন। এগুলো হলো—বীরঙ্গনা সিতারা বেগম, বেগম রোকেয়া ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তবে এতে ঐক্যমতে না পৌঁছাতেই ওই দুটি নাম প্রস্তাব করে গতকাল ভিন্ন একটি পক্ষ আবেদন করে হলের ছাত্রীদের মতামতকে অবজ্ঞা করেছে। এ জন্য তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ও নাম পরিবর্তনে গঠিত কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলামকে দায়ী করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গমাতা হলের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে আবাসিক শিক্ষার্থীরা কয়েকটি নামের ওপর ভোটাভুটি করেছিলেন। তবে তাঁরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেননি। আর একটি পক্ষ এই নাম পরিবর্তনে সম্মত ছিলেন না। ভিন্ন দুটি নাম প্রস্তাব করে যাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন, সেটার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই।