ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রেলপথে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। শনিবার বিকেলে উপজেলার শিবগঞ্জ রোড এলাকায়
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রেলপথে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। শনিবার বিকেলে উপজেলার শিবগঞ্জ রোড এলাকায়

ময়মনসিংহ-১০ আসন

বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে গফরগাঁওয়ে সড়ক ও রেলপথের বিভিন্ন স্থানে আগুন

ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। শনিবার বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্রে এ প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হয়। এরপরই মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক ও রেলপথের বিভিন্ন স্থানে আগুন দিয়ে অবরোধ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকেরা।

বিকেল চারটার দিকে গফরগাঁও উপজেলার শিবগঞ্জ রোড রেলক্রসিং এলাকায় আগুন দেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া উপজেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টেও আগুন দেওয়া হয়। আতঙ্কে গফরগাঁও পৌর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রেলস্টেশন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে স্টেশনমাস্টারকে বের করে স্টেশন তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। রেলপথের দুই পাশেই বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে ট্রেন।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকতার হোসেন বলেন, মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা গফরগাঁও এলাকার বিভিন্ন স্থানে রেলপথে আগুন দিয়েছেন। এ কারণে বিকেল চারটা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, বলা যাচ্ছে না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ-১০ আসনে মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ছাড়াও আরও পাঁচজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তাঁরা হলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ, এ বি সিদ্দিকুর রহমান, সদস্য মুশফিকুর রহমান, আল ফাত্তাহ ও মোফাখখারুল ইসলাম। শনিবার মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই মনোনয়নবঞ্চিত এ বি সিদ্দিকুর রহমান ও মুশফিকুর রহমানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় বিভিন্ন স্থানে সড়কে আগুন দিয়ে দলীয় প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের পাশাপাশি ময়মনসিংহ-গফরগাঁও ও গফরগাঁও-ভালুকা সড়কপথেও যোগাযোগ বন্ধ আছে। গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান বলেন, মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে পৌর শহরের কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। তাঁরা বিষয়টি দেখছেন।

মনোনয়নবঞ্চিত মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রত্যাশিত মনোনয়ন না হওয়ায় বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হতেই পারে। পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম হচ্ছে। এখানে শুধু আমার নেতা-কর্মী নয়, সব গ্রুপের নেতা-কর্মীরাই রয়েছে। দল সিদ্ধান্ত নিয়ে যে প্রার্থী দিয়েছে সেটি দলের। রাজনীতি তো জনগণের বাইরে নয়, জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে কী করবে। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি জনগণ কীভাবে দেখবে, এটি দেখার বিষয়।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী এ বি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, সে এমপি হওয়ার উপযুক্ত নয়। সে কারণে মানুষ মানছে না। গফরগাঁওয়ের রাস্তাঘাট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গফরগাঁও একটি ঐতিহ্যবাহী থানা। এখানে তার (মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান) মতো লোককে কেন মনোনয়ন দেয় দল? সে তো এই থানার এমপি হতে পারে না, তার সেই যোগ্যতা নেই।’

দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ বলেন, ‘দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। হয়তো ভবিষ্যতে আমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।’

মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ায় প্রত্যেক এলাকায় হাজারো মানুষ আনন্দমিছিল করছে। এলাকার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে। কতিপয় দুষ্কৃতকারী সশস্ত্র অবস্থায় গুপ্তভাবে বিশৃঙ্খলা করে পালিয়ে যাচ্ছে। এটি দু-এক দিন পর ঠিক হয়ে যাবে।’

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে। বিভিন্ন রাস্তায় বিক্ষুব্ধ লোকজন টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। তাদের বুঝিয়ে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দলীয় শীর্ষ নেতাদেরও বলা হয়েছে, যাতে তাঁদের নেতা-কর্মীদের শান্ত করা হয়।