
ট্রলারডুবির পর বঙ্গোপসাগরে পাঁচ দিন ভেসে ছিলেন ১২ জেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের উদ্ধার করা হয়। আজ শুক্রবার নৌ পুলিশ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। এর আগে গত রোববার বঙ্গোপসাগরে তাঁদের মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়।
উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন কবির হোসেন (৫২), এবাদত (৩৬), আল আমিন সিকদার (২৮), জাহিদ (২৭), রাসেল (২৪), ইব্রাহিম খান (৪০), মুনসুর (২৮), শাহ আলম (৬২), নুরুল হক (৪৫), খবির আলী (৪০), সোহাগ (৩৫) ও গোপাল মিস্ত্রী (৪০)। তাঁদের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
উদ্ধার হওয়া জেলে আল আমিন শিকদার জানান, ৫ জুলাই বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা থেকে এফবি সাইকুল নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে তাঁরা গভীর বঙ্গোপসাগরে রওনা হন। ওই ট্রলারে জেলে ও মাঝি-মাল্লাসহ ১২ জন ছিলেন। পরদিন ৬ জুলাই পায়রা সমুদ্রবন্দরের শেষ বয়ার প্রান্তে পৌঁছালে ঝড় ও ঢেউয়ের কবলে ট্রলারটি ডুবে যায়।
ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি কবির হোসেন বলেন, ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর তাঁরা ট্রলারে থাকা রিং বয়া একসঙ্গে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে ঢেউ ও স্রোতে খবির, সোহাগ ও গোপাল তাঁদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান। এরপর সাগরে পাঁচ দিন ভেসে থাকার পর রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচরসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পৌঁছান তাঁরা। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে ভোলার একটি মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা সাগরের ওই স্থানে গেলে তাঁদের দেখতে পান। পরে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া আরেক জেলে শাহ আলম বলেন, সাগরে ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর ভাসমান অবস্থায় লবণ পানি খেয়ে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটিয়েছেন তাঁরা। টানা বৃষ্টি আর ঢেউয়ের তোড়ে এক পর্যায়ে বেঁচে থাকার আশাও হারিয়ে ফেলেছিলেন।
জেলেরা জানান, তাঁদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর খবির, সোহাগ ও গোপালও বয়া আঁকড়ে ধরে সাগরে ভেসে ছিলেন।
চরমোন্তাজ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোনারচরসংলগ্ন সাগরে কিছু জেলে মাছ ধরছিল। এ সময় সাগরে মাছ ধরা জেলেরা কয়েকজনকে ভাসতে দেখে আমাদের খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে ৯ জেলেকে উদ্ধার করে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করি। এরপর রাত আটটার দিকে জীবিত অবস্থায় আরও তিন জেলেকে কাছাকাছি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া জেলেদের তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।’
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, আজ শুক্রবার ১২ জেলেকে তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।