রংপুরের বদলে লালমনিরহাটে মনোনয়ন পেয়ে যা বললেন মসিউর রহমান

মসিউর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটি করপোরেশনের একাংশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা) লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম) আসনের মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ২৪৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এতে মসিউর রহমানকে লালমনিরহাট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

রংপুর-১ আসনে মসিউরকে মনোনয়ন না দেওয়ায় ‘অসন্তুষ্ট’ তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। মসিউর রহমানও খুশি নন। আসনটিতে মসিউরের বদলে লন্ডনপ্রবাসী মঞ্জুম আলীকে দলের প্রার্থী করায় খুশি তাঁর বিরোধীরা।

এ বিষয়ে আজ শনিবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে মসিউর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি করব না ওখানে (গঙ্গাচড়া)। ওখানে হয়ে গেছে। ওখানকার কিছু লোক এলাকার মানুষের কথা বলে। ওটা সস্তা জনপ্রিয়তা। তাহলে আমি আবার জন্মস্থান যেখানে সেখানে চলে গেলাম, দেখি না কী হয়।’ মসিউর আরও বলেন, ‘আমি মন্ত্রী ছিলাম, এমপি ছিলাম, তারপরও দু-চারজনের কারণে গাত্রদাহ হয়। ৪০ বছর ওখানে (গঙ্গাচড়া) দিলাম। তারপরও ওখানে মানুষ পাওয়া যায় না। সব লোক বলে না, ওখানে ভোট করলে এখনো পারবে না। তারপরও আমি কোনো ঝামেলায় আর যাইতে চাই না।’

লালমনিরহাট-১ আসন থেকে ভোট করবেন কি না, জানতে চাইলে মসিউর বলেন, ‘সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) যদি পাল্টায়, তাহলে ভোট করব। আমরা ফ্যাসিস্টের সহযোগী, দালাল—এ রকম ম্যালা কথা বলে। এগুলো শুনতে ভালো লাগে না। এগুলো নির্বাচনী কথা না। এ রকম কথা বললে কেন যাব ইলেকশন (নির্বাচন) করতে।’

মসিউর রহমানের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়িতে। তাঁর বাবা নেছার উদ্দিন আহমেদ ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। রংপুর গুপ্তপাড়াতেও তাঁর পৈতৃক বাড়ি আছে। তিনি লেখাপড়া শেষ করে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।

২০০১ সালের পর ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে রংপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মসিউর রহমান। এরপর তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে পর জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হন। একই সঙ্গে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন মসিউর। তবে রওশন এরশাদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগে ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ–পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময় পরিবহনমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি ছিলেন মসিউর। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মসিউর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাঁর পক্ষে ভোট করলেও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ আসাদুজ্জামান বাবলুর কাছে হেরে যান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আর প্রকাশ্যে ছিলেন না মসিউর। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ চারটি মামলা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির সূত্র বলছে, ১৫ ডিসেম্বর রংপুর-১ আসন থেকে জাপার তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেখা করেন। ওই দিন ফেসবুকে লাইভে এসে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরার কথা জানান মসিউর। এরপর তিনি রংপুর-১ আসনের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

এদিকে মসিউর রহমান দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। গঙ্গাচড়া উপজেলা যুবসংহতির সাবেক সভাপতি নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (মসিউর) ২০০১ সাল থেকে গঙ্গাচড়ার রাজনীতি করেছেন। গঙ্গাচড়ার মানুষের সঙ্গে মিশে গেছেন। এখানকার মানুষের উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করেছেন। তিস্তার ডান তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ থেকে অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে তাঁর সময়ে। এসব দৃশ্যমান উন্নয়ন চোখে পড়ে। তাঁর মতো নেতাকে গঙ্গাচড়াতে প্রয়োজন।

তবে জাতীয় পার্টির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, রংপুরে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ মসিউর রহমানকে রংপুরে চায়নি।

গঙ্গাচড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব গোলাম ফারুক বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীরা লন্ডনপ্রবাসী মঞ্জুম আলীকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছেন। দল নেতা-কর্মীদের চাওয়াকে মূল্যায়ন করেছে। এ ছাড়া মসিউর রহমানকে আগে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় তিনি ছিটকে পড়েছেন।