কুমিল্লার কোটবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর এক কর্মীর বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং ওই জামায়াত কর্মীর বিচারের দাবিতে বুধবার দুপুরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন।
গত সোমবার কুমিল্লা সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাদিমুল হাসান চৌধুরীর কার্যালয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে এ ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, জামায়াতের নেতা ইফতেখার আলম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কলেজটি দখলের চেষ্টা চলছে। তাঁর নেতৃত্বে কিছু লোক গত সোমবার অধ্যক্ষকে তাঁর কার্যালয়ে লাঞ্ছিত করেছেন।
ইফতেখার আলম ভূঁইয়া জামায়াতে ইসলামীর পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন, কুমিল্লা মহানগরীর সহসভাপতি। তিনি কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের কর্মী। এ ছাড়া জেলার বুড়িচংয়ের আবিদপুর কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ইফতেখার আলম ভূঁইয়া কুমিল্লা সিটি কলেজের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীনের নির্দেশে কলেজটি জবরদখল করা হয়েছিল। তিনি অধ্যক্ষের দপ্তরে গিয়ে উত্তেজিত হয়েছিলেন। তবে তাঁকে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাদিমুল হাসান) লাঞ্ছিত করেননি।
অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কলেজের সামনের সড়কে মানবববন্ধন করেন কুমিল্লা সিটি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কলেজ শিক্ষক শাহ নেওয়াজ খান বলেন, ‘আমাদের অধ্যক্ষকে তাঁর কার্যালয়ে প্রবেশ করে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকা প্রতিষ্ঠানটি দখল করতে চান তাঁরা। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করছি।’
আরেক শিক্ষক অনিক চক্রবর্তী বলেন, নিজ কার্যালয়ের যদি একজন শিক্ষক নিরাপদ না হন, তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ থাকব। আমাদের অধ্যক্ষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে ছিলেন। এখন তাঁকে লাঞ্ছিত করে কলেজটি দখলের চেষ্টা করছে প্রভাবশালী চক্র।’
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৪৩ সেকেন্ডের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গত সোমবার জামায়াতের কর্মী ইফতেখার আলম ভূঁইয়া, তাঁর ভাই কাউসার আলম ভূঁইয়াসহ ৪ থেকে ৫ জন কুমিল্লা সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাদিমুল হাসান চৌধুরীর কক্ষে যান। ভেতরে বসে থাকা অবস্থায় বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে অধ্যক্ষের উদ্দেশে ইফতেখার আলম বলেন, ‘একদম চুপ। কান ফাটাইয়া ফেলমু। বের হ।’ এ সময় অধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, ‘আরে মিয়া ধমক দিয়া কথা বলেন কেন?’ পরে ইফতেখারের সঙ্গে থাকা আরও দুজন অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে ধাক্কা দেন। তখন কলেজের কয়েকজন প্রভাষক তাঁদের চুপ রাখার চেষ্টা করলে তাঁদের দিকেও তেড়ে আসেন ইফতেখার।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাদিমুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ইফতেখার সাহেবের কোনো বিরোধ নেই। আমি এখানে চাকরি করি। মালিকানা দিয়ে কোনো ঝামেলা থাকলে তাঁরা (জামায়াতের কর্মী ও তাঁর সহযোগীরা) কলেজ বর্তমানে যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন আমার কার্যালয়ে ঢুকে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। আমাকে লাঞ্ছিত করে মারার হুমকি দেন। আমি বিষয়টি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইফতেখার আলম ভূঁইয়া জামায়াতে ইসলামীর কোনো পদে নেই, তবে পেশাজীবী সংগঠনের নেতা এবং জামায়াতের রাজনীতি করেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমিরের দৃষ্টিতে এসেছে। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’