চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আবার চাকসু নির্বাচনের তোড়জোড়

২০১৯ সালের ২০ মার্চ চাকসু নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। নির্বাচন হয়নি। কমিটিও কোনো কাজ করেনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নির্বাচন নিয়ে আবার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

চাকসু নির্বাচনসহ ৯ দফা দাবিতে সর্বশেষ গতকাল বুধবার কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলনের’ ব্যানারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে বিগত সময়ের প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ নিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো। এখন দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

গত তিন মাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নানা দাবিদাওয়া চিঠি আকারে কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছে। প্রায় সব ছাত্রসংগঠনই চাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় চাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচনের বিষয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার মত দেন। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর ছয় সদস্যের চাকসু নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন কখন, কীভাবে হবে; শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে একটি রূপরেখা তৈরি করবে ওই কমিটি। আগামী ২৬ জানুয়ারি কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার নির্বাচনের আয়োজন করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর ছাত্রসংগঠনগুলোর মুখোমুখি অবস্থান, কয়েক দফা সংঘর্ষ ও উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

ছাত্রদল বলছে পরিবেশ নেই, বাকিরা দ্রুত নির্বাচন চায়

ছাত্রসংগঠনগুলো এক বাক্যে চাকসু নির্বাচন চায়। তবে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিবেশ নেই বলে মনে করে ছাত্রদল। শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসিন প্রথম আলোকে জানান, সুষ্ঠু পরিবেশ ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। অভ্যুত্থানের ঐক্য প্রশাসন ধারণ করতে পারেনি। প্রশাসনিকভাবে গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা বহাল রয়েছে। এখনো তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আবার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অপকর্মেরও বিচার হয়নি। এসবের বিচার করতে হবে। তারপর নির্বাচন।

তবে দ্রুত নির্বাচন চান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচন চান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আজাদ হোসেনও মে থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন চান।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক সহাবস্থান ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুত প্রশাসন নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, এটাই তাঁদের চাওয়া।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির পক্ষে তিনি নন। চাকসু নির্বাচন নিয়মিত হলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়াও উঠে আসবে। এ কারণে তিনি নির্বাচনী রূপরেখা তৈরিতে কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

  • সুজয় চৌধুরী ও মোশাররফ শাহ, চট্টগ্রাম