Thank you for trying Sticky AMP!!

চলন্ত বাসে ডাকাতিকালে যা ঘটেছিল

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাসে যাত্রীবেশে ওঠে একদল ডাকাত। ডাকাতির পর রাস্তার পাশে বাসটি ফেলে রেখে চলে যায় তারা। টাঙ্গাইলের মধুপুরের রক্তিপাড়ায়

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এক যাত্রী। তাঁর নাম হেকমত আলী। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সালিমপুর এলাকার ফল ব্যবসায়ী। তিনি গত মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে ওই বাসে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

হেকমত আলী বলেন, স্ত্রী জেসমিন আরা, তাঁদের চার বছরের ছেলে ও দুই বছরের মেয়ে, শাশুড়ি শিল্পী খাতুনকে নিয়ে তিনি মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকা থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ওঠেন। বাসটি এর আগে রাত আটটার দিকে একই উপজেলার প্রাগপুর থেকে ছেড়ে আসে। এ সময় বাসে ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী ছিলেন। ঈগল পরিবহন বাসটি ভেড়ামারা লালন শাহ সেতু ও বনপাড়া হয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জে একটি হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে বিরতি শেষে দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার দিকে চলতে থাকে।

হেকমত আলীর ভাষ্য, রাত ১২টার দিকে মহাসড়কের ওপর একটি জায়গায় চারজন তরুণ বাসের সামনে থেকে হাত তুলে ইশারা দেন। বাসচালকের সহকারী সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ওই তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন। দু-এক মিনিটের মধ্যে তরুণেরা বাসে উঠে পড়েন এবং সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে বাসের পেছনের দিকে গিয়ে বসেন। এই চার তরুণের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক ছিল। তাঁদের একজনের পিঠে ব্যাগ ছিল। তাঁরা পেছনে বসার পরপরই মোবাইল টেপাটিপি করতে থাকেন। বাস আরও ১৫ মিনিটের মতো চলে। এরপর রাস্তা থেকে আরও পাঁচজন একইভাবে বাসে ওঠেন। তাঁরাও কয়েকটি সিটে বসে পড়েন। কয়েক মিনিট পর আরেকটু সামনে গিয়ে আরও দুজন ওঠেন। এর পরপরই বাসের চালককে বাস থামাতে বলা হয়। চালক থামাতে রাজি না হলে তাঁকে মারধর করে তরুণদের দল। একজন তরুণ দ্রুত তাঁকে সরিয়ে চালকের আসনে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন।

Also Read: গভীর রাতে চলন্ত বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি, ধর্ষণ

হেকমত আলী বলতে থাকেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১০ তরুণ বাসের প্রতিটি সিটের পাশে পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁরা ছুরি ও কাঁচি পুরুষ যাত্রীদের গলায় ধরে রাখেন। তাঁদের মধ্যে তিন থেকে চারজন দ্রুত বাসের পর্দা কেটে পুরুষ যাত্রীদের মুখ, হাত ও পা বেঁধে ফেলেন। বাসের মাঝখানের লম্বা জায়গায় মাথা নিচু করে তাঁদের বসিয়ে রাখেন। বাসে থাকা ১০ থেকে ১২ জন নারী যাত্রীর মধ্যে একজনের চোখ, মুখ ও হাত বেঁধে ফেলা হয়। বাকিদের চোখ, মুখ ও হাত খোলা ছিল। ওই একজন নারী যাত্রী তাঁর শাশুড়ি। বাস তখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। বাসের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। জানালার গ্লাসগুলো আটকে দেওয়া হয়। ডাকাতেরা প্রত্যেকের কাছে গিয়ে শরীর তল্লাশি করে টাকা, মুঠোফোন এবং নারী যাত্রীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। একাধিকবার যাত্রীদের শরীর তল্লাশি করে।

হেকমত আলীর ভাষ্য, বাসের পেছনের দিক থেকে তিন সিট সামনে বসে ছিলেন তিনি। তাঁর হাত বাঁধা। তাঁর থেকে দুই হাত দূরে এক নারীকে তল্লাশি করার সময় ওই নারী প্রতিবাদ করেন। এরপর দুই তরুণ ওই নারীকে মারধর করেন, শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এ সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

হেকমত আলীর স্ত্রী জেসমিন আরা বলেন, তিনি সিটে তাঁর এক সন্তানকে বুকে জড়িয়ে মাথা নিচু করে সৃষ্টিকর্তার নাম নিচ্ছিলেন। সামনে আরেক সিটে তাঁর মা বসেছিলেন আরেক সন্তানকে নিয়ে। তাঁর হাত, চোখ, মুখ বাঁধা ছিল। তাঁদের এক শিশু কান্না করলে তরুণ দলের একজন এসে বলেন, ‘এই কাঁদিস না, আমাদের মতো ছিনতাইকারী হোস না!’

হেকমত আলী ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন আর বলেন, ডাকাত দল সব কাজ শেষ করার পর একে অপরকে ডাকাডাকি করেন। ডাকাত দলের সরদারকে তাঁরা ‘কাকা’ বলে সম্বোধন করছিলেন। মাঝেমধ্যে নুরু, সাব্বির, রকি নামেও ডাকা হচ্ছিল। রাত তিনটার দিকে ডাকাতেরা টাকা, মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি শুরু করে। বাসের ভেতরে ভাগাভাগি নিয়েও তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সড়কের এক পাশে গাড়িটি থামিয়ে দ্রুত তারা নেমে চলে যায়। বাসের ভেতর কোনো যাত্রী মাথা উঁচু করলে বা কথা বলার চেষ্টা করলে তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে।

হেকমত আলী বলেন, ভোরের দিকে যখন পুলিশ আসে, তখন কয়েকজন যাত্রীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় পুলিশ তাঁদের দুটি ছবি দেখায়। ছবির দুজন বাসের মধ্যে ছিল বলে যাত্রীরা নিশ্চিত করেন। এরপর গতকাল বুধবার সারা দিন তাঁরা মধুপুর থানাতেই ছিলেন। রাত নয়টার দিকে বিআরটিসির গাড়িতে পুলিশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে তাঁদের কুষ্টিয়ায় পাঠিয়ে দেয়।