রাগে-অভিমানে প্রায় ৩৫ বছর আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন। দীর্ঘ সময় পর তাঁর সেই ভুল ভেঙেছে। আবার পড়ালেখায় ফিরেছেন, অংশ নিচ্ছেন চলতি বছরের এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষায়। ৫১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। অতীত ভুলে এবার সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই হাঁটছেন তিনি।
দোলোয়ার হোসেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের করমদোশী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। গতকাল দেশে একযোগে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তিনি উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে অংশ নেন।
এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, দেলোয়ার ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তিনি মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন। পরে ভর্তি হন জামনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণিতেও তিনি সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ১৯৯০ সালে একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরীক্ষা চলার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার জেরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। রাগে–ক্ষোভে তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে দোলোয়ার বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই। পড়ালেখাতেও ভালো ছিলাম। নবম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম। এসএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে পাশের এক পরীক্ষার্থীর ষড়যন্ত্রে আমাকে বহিষ্কার করা হয়। আমি এই ঘটনা মেনে নিতে পারিনি। রাগে-ক্ষোভে আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। কিন্তু আমার মেয়েদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই আবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো; সবার দোয়া চাই।’
দেলোয়ার হোসেনের সংসারে স্ত্রী ও তিনি। মেয়েদের সবাইকে তিনি পড়াশোনায় ব্যস্ত রেখেছেন। ২০২১ সালে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এর কিছুদিন পর শিক্ষিত হওয়ার সুপ্ত বাসনা আবার তাঁর মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সবার অগোচরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ক্লাস করতে না পারলেও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং বাড়িতে বসেই পড়ালেখা করেছেন।