সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আগমন উপলক্ষে নেত্রকোনায় বিভিন্ন সড়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে মদন-নেত্রকোনা সড়কের মদনের বয়রাহালা এলাকায়
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আগমন উপলক্ষে নেত্রকোনায় বিভিন্ন সড়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে মদন-নেত্রকোনা সড়কের মদনের বয়রাহালা এলাকায়

এলাকার জনগণের কাছে ফিরতে উদগ্রীব বাবর

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলাসহ সব মামলা থেকে খালাস পেয়ে কারামুক্ত হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। দীর্ঘ ১৭ বছর কারাবাসের পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এখন তিনি নিজ এলাকায় ফিরতে উদগ্রীব।

লুৎফুজ্জামানের স্ত্রী তাহমিনা জামান জানান, লুৎফুজ্জামানকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় ১৭ বছরের বেশি সময় কারাগারে রাখা হয়। উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে এখন মুক্ত। তাঁর মুক্তির মধ্য দিয়ে ভাটি বাংলা তথা দেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ প্রশস্ত হয়েছে। মুক্তি পেয়ে তিনি এখন ঢাকার বাসায় অবস্থান করছেন। তবে তিনি তাঁর এলাকায় জনগণের কাছে ফিরতে উদগ্রীব। এলাকার মানুষও তাঁর জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। একটু সুস্থ হলেই তিনি এলাকায় ফিরবেন।

লুৎফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার বাড়িবাদেরা এলাকায়। তিনি নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পরিবারিক, স্থানীয় লোকজন ও বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লুৎফুজ্জামান বাবর তাঁর এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা ও নিজ জেলায় বহু মানুষকে চাকরি দেওয়াসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য তাঁর মুক্তির খবর পেয়ে তাঁকে বরণ করতে গতকাল নেত্রকোনা থেকে অনেক বাস, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। বেলা দুইটার দিকে কারাগার থেকে বের হলে ফুল দিয়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে বরণ করে নেন। সেখান থেকে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক চিকিৎসক আনোয়ারুল হক, সদস্যসচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের তালুকদার, মদন বিএনপির সভাপতি নুরুর আলম তালুকদার, খালিয়াজুরি আহ্বায়ক আবদুর রউফ স্বাধীন, মোহনগঞ্জের আহ্বায়ক সেলিম খান কার্নায়েরসহ অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে জানান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে নজরুল ইসলাম খান ও রুহুল কবির রিজভীকে জড়িয়ে ধরে লুৎফুজ্জামান বাবর কান্নায় ভেঙে পড়েন। জিয়ারত ও শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখান থেকে বনানীতে মা–বাবার কবর জিয়ারত করেন তিনি। পরে রাতে অসুস্থ বাবর গুলশান-২ এলাকায় নিজ বাসায় যান।

এদিকে লুৎফুজ্জামানের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন তাঁর এলাকার লোকজন। স্বজনেরা জানান, তিনিও এলাকায় ফিরতে উদগ্রীব। আগামী সপ্তাহে তাঁর এলাকায় আসার কথা রয়েছে। তাঁর আগমন উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন স্থান তোরণ ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। মদনের বাগজান গ্রামের ফয়েজ আহমেদ বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর এলাকায় দলমত–নির্বিশেষে খুবই জননন্দিত নেতা। তিনি যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তখন জেলার অসংখ্য মানুষকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিয়েছেন। কে কোন দল করতেন বা কে কার গ্রুপ করতেন, তা তিনি কখনো আমলে নেননি। তাই সবাই তাঁকে পছন্দ করেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে ভাটি উপজেলা হিসেবে খ্যাত মদন-মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দধারা বইছে। তাঁকে বরণ করতে শহর থেকে গ্রাম নানা রঙের তোরণ ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।

মদন সেন্টার এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ মোতাহার বলেন, ‘গতকাল লুৎফুজ্জামান বাবর ভাই মুক্তি পেয়েছেন। সব নেতা-কর্মী, অনুসারীরা ঢাকায় চলে গেছেন। সকাল থেকে অনেকেই আসতে শুরু করছেন। শুনছি, বাবর ভাই এক সপ্তাহের মধ্যে এলাকায় আসবেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব জায়গার মানুষের ভেতর উল্লাস বইছে।’

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লুৎফুজ্জামান বাবর একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, বহুদর্শী মানবিক নেতা। তিনি সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি নির্বাচনী এলাকা ছাড়া জেলায় সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৭ বছরের বেশি সময় তিনি মিথ্যা মামলায় জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হারাঞ্চলের এই স্বপ্নসারথিকে দলীয়ভাবে বরণ করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। দু–এক দিনের মধ্যে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি একটু সুস্থ হলেই এলাকায় ফিরবেন। পরে ওমরাহ পালনে যাবেন।’