কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় হামলার শিকার হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ইটের আঘাতে তাঁর মাথা ফেটে গেছে
কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় হামলার শিকার হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ইটের আঘাতে তাঁর মাথা ফেটে গেছে

বাঁকখালী নদীর জমিতে উচ্ছেদ অভিযানে হামলা, মাথা ফাটল পুলিশ সদস্যের

কক্সবাজারের শহরের বাঁকখালী নদীর জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে হামলা চালিয়েছে একদল লোক। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে মো. করিম নামের এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে তাঁর মাথা ফেটে গেছে। আহত পুলিশ সদস্যকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। তাঁদের নাম জানা যায়নি।

পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে বাঁকখালী নদী দখল করে তৈরি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। প্রথম দিন কস্তুরাঘাট এলাকার প্রায় ২০০টি পাকা, আধাপাকা ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে যৌথ বাহিনী কস্তুরাঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে কিছু লোক বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের দাবি, জমিগুলো খতিয়ানভুক্ত। জোর করে বৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

বেলা ১১টার দিকে বাঁকখালী সেতুর পাশে বর্জ্যের পাহাড় এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে বিক্ষুব্ধ কিছু লোক পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এ সময় ইটের আঘাতে কক্সবাজার পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল মো. করিম আহত হন। তাঁর মাথা ফেটে গেছে। আহত পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএর যৌথ অভিযান শুরুর পরপর স্থানীয় কিছু লোকের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় ‘বদরমোকামের উকিলপাড়া সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণ’–এর ব্যানারে কিছু লোক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ-র‍্যাব, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে তাঁরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চারজনকে আটক করে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। বেলা তিনটা পর্যন্ত শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

বাঁকখালী নদীর জায়গা থেবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় বিক্ষোভ করেন একদল লোক। আজ সকাল ১১টায় কক্সবাজারের কস্তুরাঘাটে

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আহত পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে।

গত ২৪ আগস্ট বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে চার মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ৩০ আগস্ট নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন কক্সবাজার সফরে আসেন। তখন তিনি এক সমন্বয় সভায় হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাঁকখালী নদীর তীরের ৭২১ একর জমিকে নদীবন্দর ঘোষণা করা হয়। সরকার ও জেলা প্রশাসনকে এই জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ‘নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা গতকাল সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।’