বাড়ির ছাদে কলার চিপস বানাতে ব্যস্ত লাকী চাকমা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের কলেজপাড়া এলাকায়
বাড়ির ছাদে কলার চিপস বানাতে ব্যস্ত লাকী চাকমা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের কলেজপাড়া এলাকায়

চাকরি সামলে কলার চিপস বানান লাকী চাকমা, বিক্রি করে বাড়তি আয়

একতলা ঘরের ছাদে বসানো হয়েছে চুলা। সেই চুলার ওপর একটি হাঁড়ি। এর ফুটন্ত তেলে একের পর এক ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে মসলা মাখানো কলার টুকরো। এভাবে কলা দিয়ে চিপস তৈরি করছেন এক নারী।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের কলেজপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। চিপস তৈরিতে ব্যস্ত ওই নারীর নাম লাকী চাকমা (৩৫)। চাকরির পাশাপাশি এক বছরের বেশি সময় ধরে নিজের ঘরে এভাবেই কলার চিপস বানিয়ে আসছেন তিনি। তাঁর তৈরি করা চিপসের বেশ কদর রয়েছে এলাকায়। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানেও বিক্রি হচ্ছে লাকী চাকমার তৈরি করা কলার চিপস।

ঘরের ছাদে কলার চিপস তৈরির সময় লাকী চাকমাকে সহযোগিতা করছিলেন দুজন নারী কর্মচারী। তাঁরা ভেজে নেওয়া চিপস বয়ামে রাখছিলেন। এ ছাড়া চিপসের জন্য কলাকে পাতলা করে কেটে টুকরো করছিলেন লাকী চাকমার এক আত্মীয়।

ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চিপস বানানোর চেষ্টা করি। স্বাদ যেন সব সময় একই থাকে, সেটিতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই।—লাকী চাকমা, নারী উদ্যোক্তা

লাকী চাকমা জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। এর ফাঁকে সপ্তাহে দুই-তিন দিন ঘরে কলার চিপস তৈরি করেন। এসব চিপস বিক্রি করেই প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়।

কলার চিপস তৈরির এই উদ্যোগ ২০২৪ সালের মে মাসে শুরু করেন বলে জানান লাকী চাকমা। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল তাঁর। এরপরই মূলত কলার চিপস তৈরি শুরু করেন। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে কলার চিপস তৈরি করে প্রতিবেশী ও পরিচিতজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কুড়মুড়ে এই চিপসের স্বাদ নিয়ে তখন তাঁরা বেশ প্রশংসা করেন। এতে বাণিজ্যিকভাবে চিপস তৈরি শুরুতে উৎসাহ পান লাকী চাকমা।

কলার চিপস বয়ামভর্তি করার প্রস্তুতি চলছে। সম্প্রতি তোলা

খাগড়াছড়ি শহরের মহাজনপাড়ার একটি দোকানে তাঁর চিপস বিক্রির জন্য রয়েছে একটি ছোট কর্নার রয়েছে। শুরুতে সেখানেই চিপস বিক্রি শুরু করেন লাকী। তাঁর চিপসের সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম ফরমাশ পেতে শুরু করেন। অনেকেই নানা অনুষ্ঠানের জন্য কয়েক শ প্যাকেট করে চিপসের ফরমাশ দেন। এভাবে বাড়তে থাকে ক্রেতার সংখ্যা।

লাকী চাকমা জানান, চিপস তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেন পরিপক্ব কাঁঠালি কলা। এর সঙ্গে থাকে তেল, হলুদ, ভিনেগার এবং নিজের তৈরি করা একটি ‘সিক্রেট মসলা’। এই মসলাই তাঁর চিপসের আলাদা স্বাদ তৈরি করে। লাকী চাকমা বলেন, ‘ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চিপস বানানোর চেষ্টা করি। স্বাদ যেন সব সময় একই থাকে, সেটিতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই।’

শহরের মহাজনপাড়ায় লাকী চাকমার চিপস বিক্রির কর্নারটিতে কথা হয় মিতা চাকমা নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লাকীর তৈরি করা চিপস বেশ সুস্বাদু। তাই পরিবারের জন্য নিয়মিত কিনি, বাচ্চাদেরও খাওয়াই।’

বিক্রির জন্য প্রস্তুত কলার চিপস। সম্প্রতি তোলা

লাকী চাকমা জানান, চাকরি, গৃহস্থালির কাজ ও একমাত্র সন্তানকে সামলে চিপস তৈরির এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনেক বেগ পেতে হয় তাঁকে। তবু তিনি নিজের এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে চান। কলার চিপস তৈরির পাশাপাশি আচার, বালাচাও ও নারকেল তেল তৈরি করেন করেন তিনি। লাকী চাকমা বলেন, ‘ভবিষ্যতে ব্যবসার পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কীভাবে সেটি করা যায়, সেটিই ভাবছি।’

খাগড়াছড়ির মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুস্মিতা খীসা বলেন, ‘বিভিন্ন মেলায় লাকী চাকমাকে কলার চিপস বিক্রি করতে দেখেছি। কিনে খেয়েও দেখেছি, মান বেশ ভালো। তাঁর এই উদ্যোগ স্থানীয় নারীদের উৎসাহ জোগাবে।’