
বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বুড়িমারী থেকে যাত্রার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন হাতীবান্ধা উপজেলার বুড়িমারী টু ঢাকা আন্তনগর ট্রেন বাস্তবায়ন আন্দোলন পরিষদ। আজ সোমবার সকাল থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের হাতীবান্ধা উপজেলার মেডিকেল মোড়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবরোধ করে রাখেন স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনায় উভয় পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার পথে যানজটের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে একই দিন সকাল থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কে প্রথম দিনের অনির্দিষ্টকালে জন্য অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পাটগ্রাম উপজেলার বাসিন্দারা। সকাল ছয়টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করা হয়। বেলা তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছিল।
আন্দোলনকারীরা জানান, দেশের মানচিত্রে দীর্ঘ লম্বা জেলা লালমনিরহাট। এক শ কিলোমিটার রেলপথ ও এক শ কিলোমিটার সড়কপথেই রয়েছে জেলার পাঁচটি উপজেলা, যার এক প্রান্তে সদর তথা জেলা শহর আর অপর প্রান্তে রয়েছে পাটগ্রাম উপজেলা। পাটগ্রাম উপজেলায় রয়েছে ত্রিদেশীয় বাণিজ্যকেন্দ্র বুড়িমারী স্থলবন্দর। বাংলাদেশ রেলওয়ের চারটি বিভাগীয় সদর দপ্তরের মধ্যে লালমনিরহাট একটি। রেলওয়ের বিভাগীয় শহর লালমনিরহাট জেলার যাত্রীদের জন্য দুটি আন্তনগর ট্রেন রয়েছে। একটি লালমনি এক্সপ্রেস, যা লালমনিরহাট শহর স্টেশন থেকে যাত্রা করে। অপরটি বুড়িমারী এক্সপ্রেস,এটি বুড়িমারী থেকে যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও উদ্বোধনী দিনের পর থেকে ট্রেনটির আর দেখা পাননি জেলার চারটি উপজেলার মানুষ।
লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের দূরত্ব প্রায় এক শ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ফলে এই দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে জেলা সদরে গিয়ে ওই সব আন্তনগর ট্রেন ধরতে হয় জেলার চারটি উপজেলার মানুষদের। এ কারণে আন্তনগর রেলসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন চার উপজেলা ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী, পাসপোর্টধারী যাত্রীসহ ভ্রমণপিপাসু মানুষদের।
এ কারণে জেলাবাসীর জন্য দেওয়া আন্তনগর ট্রেন বুড়িমারী এক্সপ্রেস বুড়িমারী থেকে যাত্রার দাবি করে আসছেন জেলার চারটি উপজেলার মানুষ। এ জন্য টানা চার দিন রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিতে নামেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া দীর্ঘ আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। আন্দোলনের একটি পর্যায়ে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বুড়িমারী থেকে যাত্রা শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টিকিট বিক্রি শুরু করে রেল বিভাগ। কিন্তু তা যাত্রার আগেই স্থগিত করা হয়। ফলে ক্ষুব্ধ মানুষ আরও ফুঁসে উঠে রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
টানা আট দিন লালমনিরহাট–বুড়িমারী রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে বাধ্য হয়ে এ রুটের সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার হাতীবান্ধা রেলস্টেশন থেকে মশালমিছিল করা হয়। গতকাল রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের রেলপথের পাশাপাশি লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন এলাকাবাসী। হাতীবান্ধা মেডিকেল মোড়ে মহাসড়কের পাশে মঞ্চ করে মহাসড়কে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা।
মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের কারণে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার দুই প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার পথে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে। বাধ্য হয়ে যানবাহনের যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে ছোট ছোট যানবাহনে যাতায়াত করেছেন। বিপাকে পড়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক।
অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বুড়িমারী টু ঢাকা আন্তনগর ট্রেন বাস্তবায়ন আন্দোলন পরিষদের সমন্বয়ক এম সাহিদুজ্জামান, ফিরোজ হোসেন, নিশাত ফারুক, সামসুল আলম খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মহসিন আলম, রানা, তাওহীদ প্রমুখ। এ কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছেন পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ও দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
তাঁদের মধ্যে আছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল হক প্রধান, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকার রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ালিউর রহমান, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর, যুবদলের আহ্বায়ক রাবিউল ইসলাম, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অধ্যক্ষ আবদুর রহিম প্রমুখ।