Thank you for trying Sticky AMP!!

আসামির সঙ্গে নামের মিল, নিরপরাধ কৃষক জেলে

গ্রেপ্তার হওয়া নাজিম উদ্দিন (৪৩)

ডাকাতির মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার এক কৃষক বিনা অপরাধে তিন সপ্তাহ ধরে জেল খাটছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ডাকাতি মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ধরতে গিয়ে শ্যামগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও পূর্বধলা থানা-পুলিশ ওই কৃষককে গ্রেপ্তার করেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকের নাম নাজিম উদ্দিন (৪৩)। তিনি হাটবারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী সীতাংশু বিকাশ আচার্য বলেন, ‘কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা পুলিশের উচিত ছিল। যে কাজটি করা হয়েছে, সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। নিরীহ দিনমজুর নাজিম উদ্দিনকে আদালত দ্রুত মুক্তি দেবেন বলে আশা করছি।’

রোববার দুপুরে হাটবারেঙ্গা গ্রামে নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন তাঁর পরিবারের সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ৩৫ জনের সঙ্গে। নাজিম উদ্দিনের মা ছকিনা খাতুন বলেন, নাজিম উদ্দিন কখনো ভ্যান চালান, কখনো দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি জীবনে কখনো নেত্রকোনা জেলার বাইরে যাননি। একই নাম হওয়ায় অপরাধী না হয়েও নাজিম উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এখন তিনি জেল খাটছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্বধলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিসমত বারেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিন (৩৫) প্রায় ১৭ বছর আগে তাঁর ঘরবাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান। পরে তিনি সুনামগঞ্জের নৈগাং এলাকায় বিয়ে করেন। ২০১৩ সালের ৪ মে সিলেটে জলালাবাদ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা হয়। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ওই মামলার রায়ে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার সময় তিনি পলাতক ছিলেন। পরে আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে কিসমত বারেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার না করে হাটবারেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে বিনা অপরাধে নাজিম উদ্দিন সিলেট কারাগারে রয়েছেন।

গোহালাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাটবারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হাসনাত জামান বলেন, নাজিম উদ্দিন সহজ–সরল মানুষ। তিনি এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁর নামে কোনো থানায়ও মামলা নেই। কিসমত বারেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিনের নামের সঙ্গে মিল থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। পরে তাঁরা পুলিশকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।

ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা পরিষদ থেকে থানা-পুলিশকে এ বিষয়ে প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি।’

শ্যামগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন ও পূর্বধলা থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও ভোটার আইডিতে নামের মিল থাকায় হাটবারেঙ্গা গ্রামের নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি কিছুক্ষণ আগে শুনেছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তবে নির্দোষ নাজিম উদ্দিনকে মুক্ত করতে সব ধরনের আইনি সহায়তা করা হবে। আর পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’