বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অক্সিজেন হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, যার কোনো বিকল্প নেই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অক্সিজেন হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, যার কোনো বিকল্প নেই

আজ বিশ্ব অক্সিজেন দিবস

অক্সিজেনের বিকল্প ওষুধ নেই

  • বিশ্রামে থাকা একজন মানুষের প্রতি মিনিটে গড়ে ২০০ মিলিলিটার অক্সিজেনের দরকার হয়। সবচেয়ে বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় মস্তিষ্কে।

  • মানুষ খাদ্য ছাড়া অনেক দিন বাঁচতে পারে, পানি ছাড়াও কয়েক দিন চলতে পারে। কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষ মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সিজেনকে জীবনদায়ী ওষুধ বলে বিবেচনা করছে। করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার আলোচনায় অক্সিজেন গুরুত্ব হারিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়িতে থাকা রোগীদের অক্সিজেন ব্যবহারের বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে।

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। করোনার আগে দেশে দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের প্রয়োজন হতো। মহামারির সময় এই চাহিদা আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়। একই সময় ভারত থেকে অক্সিজেন আসা বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর খবরও প্রকাশ পায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও অন্য দাতাদের সহায়তায় স্বাস্থ্য বিভাগ সারা দেশে ১২০টি সরকারি ও বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন চালু করেছিল। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ৩০ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়। একপর্যায়ে অক্সিজেনের সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার। ওই শাখার পরিচালক আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের কোনো হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট বা সমস্যা নেই। আপাতত সংকট বা সমস্যা দেখা দেওয়ার কোনো আশঙ্কাও নেই।’

এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব অক্সিজেন দিবস পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর ২ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য অক্সিজেন’। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) দিনটি পালন করবে ৭ অক্টোবর।

বাতাসের ২১ শতাংশ অক্সিজেন। বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা করে শিল্পে ব্যবহার করা হয়, একে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। আবার হাসপাতালেও ব্যবহার করা হয়। হাসপাতালে ব্যবহৃত অক্সিজেন হতে হয় বিশুদ্ধ।

অক্সিজেন কেন জরুরি

করোনা মূলত শ্বাসতন্ত্রের রোগ। তবে অক্সিজেন যে শুধু করোনা বা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগের জন্য প্রয়োজন হয়, তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অক্সিজেন হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, যার কোনো বিকল্প নেই। সার্জারি ও ট্রমায় কৃত্রিম অক্সিজেনের দরকার হয়। বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী ও নবজাতকেরও এটি দরকার হয়।

মানুষের শরীরের রক্ত, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, টিস্যু ও ত্বকে অক্সিজেন থাকে। বেঁচে থাকার জন্য বিরতিহীনভাবে সারা জীবন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। মানুষ অক্সিজেন পায় শ্বাসের মাধ্যমে নেওয়া বাতাস থেকে। বিশ্রামে থাকা একজন মানুষের প্রতি মিনিটে গড়ে ২০০ মিলিলিটার অক্সিজেনের দরকার হয়। শরীরে সবচেয়ে বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় মস্তিষ্কের। মানুষ খাদ্য ছাড়া অনেক দিন বাঁচতে পারে, পানি ছাড়াও কয়েক দিন চলতে পারে। কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষ মারা যায়।

বাতাসের ২১ শতাংশ অক্সিজেন। বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা করে শিল্পে ব্যবহার করা হয়, একে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। আবার হাসপাতালেও ব্যবহার করা হয়। হাসপাতালে ব্যবহৃত অক্সিজেন হতে হয় বিশুদ্ধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, উৎপাদিত অক্সিজেন সংরক্ষণ করা, সরবরাহ করা, সহজলভ্য করা, মান ঠিক রাখা ও রোগীর শরীরে দেওয়া পর্যন্ত একটি জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভোগা মানুষ অক্সিজেন পেলে তাঁর জীবনমান বদলে যায়। তাঁদের অক্সিজেন দেওয়ার পথে বাংলাদেশ যাত্রাই শুরু করেনি। এ বছরের অক্সিজেন দিবসে এই নতুন পথে যাত্রা শুরুর কথা সক্রিয়ভাবে চিন্তা করতে হবে।
আহমদ এহসানূর রহমান, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী

কেন নতুন চিন্তা

দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। তাঁদের একটি অংশ দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। এক পরিসংখ্যান বলছে, শুধু শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন দুই লাখ মানুষ। তাঁদের অনেকে হাসপাতালে যেতে পারেন না বা হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। এসব মানুষের অক্সিজেন থেরাপি বাড়িতে দেওয়া সম্ভব।

এ ব্যাপারে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট–এর মেডিকেল অক্সিজেন সুরক্ষা–সম্পর্কিত কমিশন রিপোর্টের নির্বাহী কমিটির সদস্য আহমদ এহসানূর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভোগা মানুষ অক্সিজেন পেলে তাঁর জীবনমান বদলে যায়। তাঁদের অক্সিজেন দেওয়ার পথে বাংলাদেশ যাত্রাই শুরু করেনি। এ বছরের অক্সিজেন দিবসে এই নতুন পথে যাত্রা শুরুর কথা সক্রিয়ভাবে চিন্তা করতে হবে।’