Thank you for trying Sticky AMP!!

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে দেখেন, ঝড়ে ঘর উড়ে গেছে

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আমন ধান শুয়ে পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফসল রক্ষায় কৃষক ধান কাটতে ব্যস্ত। গতকাল পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে নিজের ঘর আর খুঁজে পাননি খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের বেলাল হোসেন। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর তাণ্ডবে উড়ে গেছে তাঁর ঘর। গত দুদিন পরিবার নিয়ে থাকছেন গ্রামের পাশের বেড়িবাঁধে। সেখানে অন্যদের সঙ্গে টিন ও পলিথিনের ছাউনির নিচে কোনোরকমে পরিবার নিয়ে দিন কাটছে তাঁর।

দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামে বেলালের মাছের ঘের রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সেই ঘেরের মাছও ভেসে গেছে। ঘরের সঙ্গে উপার্জনের ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন কী করবেন তিনি, ভেবে পাচ্ছেন না। তাঁর দুই মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। বেলাল আশায় আছেন, সরকার দ্রুত সহায়তার হাত বাড়াবে।

কয়রা উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার রাতের ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ ঘর।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা হবে। দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সরকারিভাবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৫০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

 শুধু কয়রা নয়, বুলবুলের ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে খুলনাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে। বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বুলবুল উপকূলীয় ও পার্শ্ববর্তী ১৬টি জেলার ১০৩টি উপজেলায় প্রভাব ফেলেছে। এতে রোপা আমন, শীতকালীন শাকসবজি, সরিষা, খেসারি, মসুর ও পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবাদকৃত ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৮ হেক্টর জমির মধ্যে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬ হেক্টর (মোট আবাদকৃত জমির ১৪ শতাংশ) জমি ঝড়ের কবলে পড়ে। এর মধ্যে ২২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৬৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। মোট ৫০ হাজার ৫০৩ জন কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসাব পাওয়া যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য বর্ধিত প্রণোদনা কর্মসূচির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত প্রণোদনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষিঋণের বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ও ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করছে। খুব শিগগির এই হিসাব চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বেশি ছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত গতকালের প্রতিবেদন বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে নয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে ভোলার ইলিশাঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবিতে ১০ জন নিহত হয়েছেন।

উপকূলে ক্ষতচিহ্ন

বুলবুলের আঘাতে বাগেরহাটের ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার। ঝড়ে এই জেলায় ৮ হাজার ৭৮৮টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৭৫টি ঘরবাড়ির।

সদর উপজেলার দক্ষিণ খানপুর গ্রামের আনোয়ারা বেগম ও আবদুর রশিদ বলেন, তাঁদের বসতঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ভাঙা ঘর ঠিক করার মতো টাকা নেই। তাই ভাঙা ঘরেই পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্ত করতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও জনপ্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা তৈরি করছেন। তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। ইতিমধ্যে ৮৫০ বান্ডিল ঢেউটিন, ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান, ২০০ মেট্রিকটন চাল ও প্রায় ২ হাজার কার্টন শুকনা খাবার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। এ সময় স্থানীয় লোকজন টেকসই বেড়িবাঁধ ও নতুন আশ্রয়কেন্দ্র করার দাবি জানান।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা ও সাতক্ষীরা এবং প্রতিনিধি বাগেরহাট]