Thank you for trying Sticky AMP!!

ভাঙনের পূর্বাভাস কি সিন্দুকেই বন্দী থাকবে

সিইজিআইএস ২০০৪ সাল থেকে প্রায় নিখুঁতভাবে বড় নদীগুলোর ভাঙনের পূর্বাভাস বিশ্লেষণের কাজ শুরু করে। এ বছরেও পূর্বাভাস ছিল।

পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের নবনির্মিত ওমর আলী স্কুল ও সাইক্লোন শেল্টার

এবারের বন্যা বেশ দীর্ঘস্থায়ী হলো। বানের পানি অনেক দিন ধরে ছিল। তবে পানির উচ্চতা ২০১৯ সাল, এমনকি ২০১৮ সালকে ছাড়াতে পারেনি এবারের বন্যা। বাড়িতে-ভিটায় পানি কম ছিল, কিন্তু মাঠঘাট ছিল ভরা। এখনো অনেক অঞ্চলে পানি আটকে আছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ভাঙন এবার ছিল সবচেয়ে আলোচিত। দিনের পর দিন টিভি চ্যানেলের পর্দায় জীবন্ত ভাঙনের ছবি দেখানো হয়েছে। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড় বড় দালান নদীতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার ছবি আমরা দেখেছি। এসব অবকাঠামো কোনোটি বিলীন হয়েছে উদ্বোধনের আগে, কোনোটি বছর না ঘুরতেই।

সব খবর এখনো নথিভুক্ত পাক্কা হিসাবের তালিকায় জমা হয়নি। তথ্য-তালাশ চলছে, ছক পাঠানো হয়েছে। কোভিড তো, তাই সময় লাগছে। কিন্তু যখন কোভিডের আসর ছিল না, তখন কি সব সময়মতো পৌঁছে যেত? সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ঢাকা বিভাগে নদীতে বিলীন হয়েছে ৯টি বিদ্যালয়। রাজশাহী অঞ্চলে নদীতে হারিয়ে গেছে ১৫টি বিদ্যালয়। রংপুরে গেছে ১৬টি।

এর বাইরে বরিশালে পাঁচটি ও খুলনায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে গেছে নদীতে। সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামের হিসাব এখানে নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা তাদের বিভাগীয় কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির একটা খসড়া নির্ঘণ্ট তৈরি করেছে। সেই নির্ঘণ্ট অনুযায়ী সারা দেশে ৩ হাজার ৯১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু নদীগর্ভেই বিলীন হয়েছে ৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া ৩ হাজার ৮৬৬টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একটি সভায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি খসড়া তালিকা উপস্থাপন করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী এবারের বন্যায় সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ৮৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যাঁরা টিভি আর পত্রপত্রিকায় ভাঙনের ছবি দেখেছেন, তাঁরা সাক্ষী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইট-কাঠ, দরজা-জানালা নিয়েই নদীতে হারিয়ে গেছে। ভাঙনের আলামত দেখা দিলেই প্রতিষ্ঠানগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার নিয়ম। নিলামের প্রাপ্ত টাকা জমা হবে সরকারি কোষাগারে। কেন এতগুলো প্রতিষ্ঠান নিলাম ছাড়াই নদীতে বিলীন হলো? কে জবাব চাইবে আর কে জবাব দেবে? তবে কোভিডের ঘাড়ে দোষ চাপানো যেতেই পারে। শিবচরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ভাঙবেই যে, সেটা তো নিশ্চিত নয়। নিলাম হলো। নিলামের ক্রেতা সব ভেঙেচুরে নিয়ে গেল। কিন্তু নদীভাঙন হলো না, তখন কী হতো?

আমাদের অনেকেরই জানা নেই নদীভাঙনের পূর্বাভাস এখন আর গণকের গণনার বিষয় নেই। সরকারের একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান (সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিয়োগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস—সিইজিআইএস) ২০০৪ সাল থেকে প্রায় নিখুঁতভাবে বড় নদীগুলোর ভাঙনের পূর্বাভাস বিশ্লেষণের কাজ শুরু করে। এ বছরেও পূর্বাভাস ছিল। ইংরেজিতে লেখা সেসব বিস্তারিত খবর বইয়ের মলাটে ছেপে আসতে আসতে হয়তো একটু সময় লেগেছে। বলা বাহুল্য, এ ক্ষেত্রেও সেই কেষ্ট বেটা কোভিডকেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

কিন্তু যখন কোভিড ছিল না?

শরীয়তপুরের নড়িয়া অঞ্চলের ভয়াবহ ভাঙন নিয়ে ২০১৮ সালে বিবিসি কয়েকটি সরেজমিন প্রতিবেদন করে। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনে সিইজিআইএসের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, এমন দুর্দশা যে নেমে আসছে, সে ব্যাপারে আগেভাগেই পূর্বাভাস ছিল। সরকারের একটি ট্রাস্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অন্তত চার মাস আগে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন ভাঙনের কথা উল্লেখ করেছিল। ১২ বছর ধরে বাংলাদেশের নদীভাঙন সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে এই সংস্থা। সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে অর্থায়নে তারা এমন প্রতিবেদন দিয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন সহকারী নির্বাহী পরিচালকের বরাত দিয়ে সে সময় বলা হয়েছিল, প্রতিবছরের মতো সেবারও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। ওই বছর তাদের পূর্বাভাস ছিল যে বিরাট ভাঙন হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের যে প্রেডিকশন (পূর্বাভাস), দেখা গেছে, তা প্রায় ঠিকই আছে।’

তাহলে কি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপরই সরকারের আস্থা নেই? জানা গেছে, গত বছর থেকে অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে নদীভাঙনের পূর্বাভাসের কাজে আর অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও নিজেদের আয়ের উৎস থেকে ব্যয় মিটিয়ে সিইজিআইএস কাজটা করে যাচ্ছে।

নদীভাঙনের পূর্বাভাস দিয়ে কী হবে

এটা ঠিক, সব ভাঙন প্রতিরোধযোগ্য নয়। কিংবা ভাঙন প্রতিরোধে যে খরচ পড়বে, তাতে ভাঙন এলাকার স্থাপনা, বসতি, কৃষিজমি ইত্যাদির মূল্যের সঙ্গে খাপ খাবে না। অথবা ওই এলাকার প্রতিরোধ প্রচেষ্টা রাজনৈতিকভাবে সবল বা অর্থনৈতিক বলে বলীয়ান অন্য একটা এলাকাকে নাজুক করে তুলতে পারে। অনেকেই মনে করেন, দরজায় খিল এঁটে এসব প্রশ্নের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা না নেওয়ার আগে চুপ থাকা ভালো। কোথায় এবার ভাঙন হতে পারে, সে খবর দশ কান হলে ঝুঁকিতে থাকা জনপদের মানুষ সোচ্চার হতে পারে। আন্দোলন হতে পারে। রাজনৈতিক সুবিধার হাত-চালাচালি হতে পারে। আবার অনেকে বলেন, পূর্বাভাস দিলাম, মানুষ সরে গেল কিন্তু ভাঙল না, তখন কী হবে? ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস, এমনকি বৃষ্টির আগাম বার্তা সব সময় একই মাত্রায় সঠিক হয় কি?

তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাভাসকে আমলে নিয়ে নদীভাঙন থেকে জনপদ ও স্থাপনা রক্ষার কাজ পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে, সংশোধন করতে পারে। যে যা-ই করুক বা না করুক, মানুষ এই পূর্বাভাস পাওয়ার এক নম্বর হকদার। তাঁরা যদি মাস ছয়েক আগে জানতে পারেন তাঁদের ঘরবাড়ি, দোকান, বাজার, স্কুল টিকবে না, তাহলে তাঁরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। যে জমি থাকবে না, সে জমিতে তাঁরা বীজ ফেলবেন কেন? নতুন স্থাপনা তৈরি করবেন কেন?

সব ভাঙন প্রতিরোধযোগ্য নয়। কিংবা ভাঙন প্রতিরোধে যে খরচ পড়বে, তাতে ভাঙন এলাকার স্থাপনা, বসতি, কৃষিজমি ইত্যাদির মূল্যের সঙ্গে খাপ খাবে না। অথবা ওই এলাকার প্রতিরোধ প্রচেষ্টা রাজনৈতিকভাবে সবল বা অর্থনৈতিক বলে বলীয়ান অন্য একটা এলাকাকে নাজুক করে তুলতে পারে।

চাঁদপুর কি কুড়িগ্রাম—সব জায়গায় মানুষ বলেছে, ভুল জায়গায় ইমারত করা হয়েছে। আমাদের কথা শোনা হয়নি। গাঙপারের মানুষ যেমন বানের ভাও বোঝেন, তেমনি টের পান নদীর চলাফেরার গতিপথ পরিবর্তনের ইশারা। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানকে যুক্ত করতে পারলে পূর্বাভাস ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আর সম্পদের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বছর দুয়েক আগে যমুনার এক চরে নদীর ভাঙন থেকে স্কুলের সম্পদ রক্ষার অসম যুদ্ধ করতে দেখেছিলাম স্কুলে প্রধান শিক্ষক সখিনা বেগমকে। অবহেলা-অবিবেচনায় পড়ে থাকা এই প্রান্তিক এলাকার স্কুলেও পঞ্চম শ্রেণিতে ২৭ জন শিক্ষার্থীর ২৪ জনই ছিল মেয়ে। খিড়কিতে পড়ে থাকা মেয়েদের লেখাপড়ায় আগ্রহ স্বপ্নের বাংলাদেশের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। সখিনা আপার সঙ্গে বৃষ্টিবাদল আর ভাঙনের মধ্যে কাজ করছিলেন সবাই। হাতে হাতে সবাই মিলে যা বাঁচাতে পারছেন, তা নিয়ে রাখছিলেন প্রধান শিক্ষিকার তখনো জেগে থাকা ভিটায়। এ রকম প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকদের স্কুল রক্ষার যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার কোনো মানে নেই।

তাহলে কমপক্ষে ছয় মাস আগে জানিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য মজুত রেখে লাভ কী যদি তা মানুষের কাজে না লাগে, তার কষ্ট বাড়ায় খামোখা। প্রথমে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি, পরে ব্র্যাক, এবার বেসরকারি সংস্থা কেয়ার সীমিত আকারে নদীভাঙনের পূর্বাভাস পল্লির মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে সিইজিআইএসকে সাহায্য করেছে।

কেয়ার এবার পূর্বাভাস জানানোর পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের বাড়িঘর স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা প্রদান করে। পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের পর এ ধরনের কাজের সঠিক ফলাফল জানা যাবে। তবে মানুষ যে দুশ্চিন্তা আর শেষ মুহূর্তের হইহল্লা থেকে মুক্ত থেকে তার সম্পদ রক্ষা করতে পেরেছে, সেটা খালি চোখেই দেখা যায়। বেসরকারি সংস্থার এসব পরীক্ষামূলক ‘পাইলট প্রজেক্ট’ তাদের সেমিনার, ওয়ার্কশপ আর সাফল্যের মালায় মণিমুক্তা হয়ে জ্বলবে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে দেশের সব ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদীভাঙনের পূর্বাভাস আর মানুষকে সহায়তার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। যুক্ত করতে হবে স্থানীয় সরকারকে, আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে।

কতটা সঠিক এই পূর্বাভাস

সিইজিআইএসের নদীভাঙন-সংক্রান্ত পূর্বাভাস শতকরা ৭০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। স্থানভেদে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা ৯৫ শতাংশও ছাড়িয়ে গেছে। কেয়ারের এবারের অভিজ্ঞতা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যেকোনো পূর্বাভাসের জন্য এতটা নিখুঁত হওয়া যথেষ্ট শ্লাঘার ও গর্বের। পূর্বাভাস-পূর্ব বিশ্লেষণের সময় সিইজিআইএস তাদের সংগ্রহে থাকা শত বছরের পুরোনো তথ্য-উপাত্ত আমলে রাখে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি, মাঠপর্যায়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, নদী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বা বিযুক্ত নানা স্থাপনা ও কাঠামোর অবস্থান ও সম্প্রসারণকেও বিবেচনায় রেখে তারা একটা সিদ্ধান্তে আসে। বছরের শেষে তারা তাদের পূর্বাভাসের একটা মাঠ মূল্যায়ন করে। গরমিল পাওয়া গেলে তার কারণ অনুসন্ধান করে পরবর্তী সময়ে সংশোধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এসবের জন্য অর্থের প্রয়োজন। অর্থের জোগান বন্ধ হয়ে গেলে সিইজিআইএসকে কনসালট্যান্সি (পরামর্শ প্রদান) করে টাকা জোগাড় করতে হবে। অভিজ্ঞতা বলে, একটা সংস্থা যখন কনসালট্যান্সির দোলায় চাপতে বাধ্য হয়, তখন সে তার ভালো লাগার কাজ, দেশের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ থেকে সময় হারাতে থাকে। সিইজিআইএস, বিশেষ করে ভাঙন পূর্বাভাসের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা ক্রমশ যেন সেই অনিবার্য প্যাঁচে পড়তে যাচ্ছেন।

নদীভাঙনের খবরাখবর পত্রপত্রিকায় বা সংসদের বক্তৃতায় উঠে এলে তড়িঘড়ি করে বালুর বস্তা, কখনো জিও ব্যাগ ফেলে কাজ দেখানো হয়। বর্ষার দিনে এসবে তেমন কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয় না। মূল কাজটি হওয়া উচিত শুকনার সময়। কোথায় কী কাজ করলে কতটা কী রক্ষা পাবে, সেটা বুঝতে হলে সিইজিআইএসকে সঙ্গে রাখতে হবে। বিজ্ঞানের কথা শুনতে হবে।

সিইজিআইএস এখন পর্যন্ত শুধু বড় তিনটা নদীর পূর্বাভাস নিয়েই কাজ করেছে। অপেক্ষাকৃত ছোট নদীগুলোও তাদের পূর্বাভাসের আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রয়োজন শুধু বড় নদীগুলোর তীর নয়, বরং নদীমধ্যবর্তী চরগুলোর জন্যও পূর্বাভাসের কাজ করা। নেই নেই করেও এ রকম চরে প্রায় ১০-১৫ লাখ মানুষ বসবাস করে। তাদের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পূর্বাভাস খুবই জরুরি।

নদীভাঙনের খবরাখবর পত্রপত্রিকায় বা সংসদের বক্তৃতায় উঠে এলে তড়িঘড়ি করে বালুর বস্তা, কখনো জিও ব্যাগ ফেলে কাজ দেখানো হয়। বর্ষার দিনে এসবে তেমন কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয় না। মূল কাজটি হওয়া উচিত শুকনার সময়। কোথায় কী কাজ করলে কতটা কী রক্ষা পাবে, সেটা বুঝতে হলে সিইজিআইএসকে সঙ্গে রাখতে হবে। বিজ্ঞানের কথা শুনতে হবে।

এই বছর সিইজিআইএস প্রথমবারের মতো দুই বছরের পূর্বাভাস দিয়েছে। এসব পূর্বাভাস সংশ্লিষ্ট সব জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও
ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উচিত হবে এই পূর্বাভাসকে আমলে নিয়ে তাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। কিছু না পারলে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া।

● লেখক: গবেষক

nayeem5508@gmail.com